খাদ্যে ব্যবহৃত কৃত্রিম রং-এর (Artificial color) বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (Food and Drug Administration – এফডিএ) তিনটি নতুন প্রাকৃতিক খাদ্য রং ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের দিকে পরিবর্তনের একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এফডিএ’র এই সিদ্ধান্তের ফলে খাদ্য প্রস্তুতকারকদের জন্য খাদ্য উৎপাদন আরও নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর করার সুযোগ তৈরি হবে।
এই নতুন অনুমোদিত রংগুলো হলো: গ্যালডিয়েরিয়া এক্সট্রাক্ট নীল (Galdieria extract blue), বাটারফ্লাই পি ফুল এক্সট্রাক্ট (butterfly pea flower extract), এবং ক্যালসিয়াম ফসফেট (calcium phosphate)। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য প্রস্তুতকারকরা খাদ্য সামগ্রীতে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম রং ব্যবহার করে আসছিলেন, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
বিশেষ করে, ক্যান্সার এবং স্নায়ু বিষয়ক সমস্যাগুলির সঙ্গে কৃত্রিম রং-এর সম্পর্ক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এই কারণে, অনেক দেশেই এখন খাদ্য সামগ্রীতে প্রাকৃতিক রং ব্যবহারের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের সেক্রেটারি রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র, এই পরিবর্তনের পক্ষে জোরালো সমর্থন জুগিয়েছেন। তিনি পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক রং-এর ব্যবহার ধীরে ধীরে কমানোর উপর জোর দিয়েছেন এবং নিরাপদ, প্রাকৃতিক বিকল্প ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
এফডিএ’র কমিশনার ড. মার্টি মাকারিও জানিয়েছেন, খাদ্য প্রস্তুতকারকদের সাথে একত্রে কাজ করে এই রংগুলো পর্যায়ক্রমে খাদ্য থেকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নতুন অনুমোদন পাওয়া রংগুলোর মধ্যে গ্যালডিয়েরিয়া এক্সট্রাক্ট নীল তৈরি হয় গ্যালডিয়েরিয়া সালফারিয়ার (Galdieria sulphuraria) নামক এক প্রকার লাল শৈবাল থেকে। এই শৈবাল উষ্ণ প্রস্রবণ এবং আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে পাওয়া যায়।
বাটারফ্লাই পি ফুল এক্সট্রাক্ট আসে বাটারফ্লাই পি গাছের শুকনো ফুলের পাপড়ি থেকে। এটি ইতিমধ্যেই কিছু খাবারে, যেমন স্পোর্টস ড্রিংকস, ফলের রস, এবং আইসক্রিমে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত।
নতুন অনুমোদনে এই রং এখন রেডি-টু-ইট সিরিয়াল, ক্র্যাকার, স্ন্যাক্স, এবং চিপস-এর মতো খাবারেও ব্যবহার করা যাবে।
ক্যালসিয়াম ফসফেট একটি খনিজ যৌগ, যা সাদা রং সরবরাহ করে। এটি রেডি-টু-ইট চিকেন পণ্য, সাদা ক্যান্ডি, এবং ডোনাটের চিনিতে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে।
তবে, প্রাকৃতিক রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সিনথেটিক রং-এর তুলনায় প্রাকৃতিক রং-এর দাম বেশি হতে পারে।
এছাড়াও, কিছু প্রাকৃতিক রং তাপ এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যা তাদের স্থায়িত্বের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। খাদ্য প্রস্তুতকারকরা বলছেন, গ্রাহকরা সাধারণত রঙিন খাবার পছন্দ করে এবং তাদের পছন্দের স্বাদের সঙ্গে রং-এর একটা সম্পর্ক থাকে।
তাই খাদ্য প্রস্তুতকারকদের জন্য রং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক রং সাধারণত উদ্ভিদ থেকে আসে এবং খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা হয়, তাই মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এর তেমন কোনো খারাপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে, খাদ্য প্রস্তুতকারকদের জন্য প্রাকৃতিক রং ব্যবহারের খরচ এবং স্থিতিশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যের ধারণা বর্তমানে বাংলাদেশেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই, এফডিএ’র এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের খাদ্য প্রস্তুতকারকদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা হতে পারে।
আমাদের দেশেও খাদ্য সামগ্রীতে প্রাকৃতিক রং-এর ব্যবহার বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)