যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)-এর সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত এখন প্রশ্নের মুখে। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু অর্থনৈতিক উপাত্তের কারণে এমনটা হয়েছে, যা মার্কিন অর্থনীতির গতিপথ নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কর্মসংস্থান পরিস্থিতির দুর্বলতা এবং ফেডারেল রিজার্ভের অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য এই আলোচনার মূল বিষয়।
ফেডারেল রিজার্ভ গত সপ্তাহে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণ ছিল, তারা মনে করেছিলো যে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মজবুত শ্রমবাজারের কারণে নীতিনির্ধারকদের হাতে এখনো সময় আছে, তারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর কী প্রভাব পড়ে, তা দেখে নিতে পারেন। সুদের হার কমালে কর্মসংস্থান বাড়তে পারে, কিন্তু মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে, এমন একটা আশঙ্কাও ছিলো তাদের মধ্যে।
কিন্তু এর কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হলো জুলাই মাসের কর্মসংস্থান বিষয়ক নতুন তথ্য। এতে দেখা যায়, শ্রমবাজারের অবস্থা পাওয়েলের ধারণার চেয়ে অনেক দুর্বল।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে মাত্র ৭৩ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, যা সাধারণত জনসংখ্যার বৃদ্ধি ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে অনেক কম। একই সময়ে, বেকারত্বের হারও বেড়ে ৪.২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগের মাসে ছিল ৪.১ শতাংশ।
শুধু তাই নয়, আগের দুই মাসের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত তথ্যও সংশোধন করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। নতুন তথ্য অনুযায়ী, মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত গড় মাসিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ২০০৯ সালের পর, মহামারীকালীন মন্দা বাদে, যেকোনো তিন মাসের তুলনায় সর্বনিম্ন ছিল।
ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বোর্ডের কয়েকজন সদস্য। সাধারণত এমনটা দেখা যায় না।
ফেডারেল রিজার্ভের গভর্ণর ক্রিস্টোফার ওয়ালার এবং ভাইস চেয়ার ফর সুপারভিশন মিশেল বোম্যান সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। ১৯৯৩ সালের পর এই প্রথম এত বেশি সংখ্যক সদস্য কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিলেন।
শুক্রবার (যেদিন এই তথ্য প্রকাশ হয়) দেওয়া বিবৃতিতে এই দুই কর্মকর্তা শ্রমবাজারের দুর্বলতাকে তাদের মতভেদের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা ট্রাম্পের শুল্কনীতির সম্ভাব্য প্রভাবকে কম গুরুত্ব দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ফেডারেল রিজার্ভকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং দুর্বল শ্রমবাজার—উভয় সমস্যা সমাধানে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছে।
মিশেল বোম্যান তার বিবৃতিতে বলেছেন, “শ্রমবাজার এখন কম গতিশীল এবং এতে দুর্বলতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, চলতি বছর কয়েকটি নির্দিষ্ট শিল্পই মূলত নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করেছে, যা জুলাই মাসেও অব্যাহত ছিল।
তবে, ফেডারেল রিজার্ভের সিদ্ধান্তকে এখনই ভুল বলা যায় কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ক্লিভল্যান্ড ফেডের প্রেসিডেন্ট বেথ হ্যামাক ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “প্রতিবেদনটি অবশ্যই হতাশাজনক, তবে আমরা কোনো একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে খুব বেশি কিছু বিবেচনা করতে চাই না। আমি মনে করি, আমরা গত সপ্তাহে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা সঠিক ছিল।”
অতীতেও এমন হয়েছে। যখন বেকারত্বের হার দ্রুত বেড়েছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার কমানোর জন্য সমালোচিত হতে হয়েছিল।
পরে দেখা গেছে, পরিস্থিতি ততটা খারাপ ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর ডিসেম্বরে, যখন অনেক সমালোচনা হচ্ছিল, তখন কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল। ওই মাসে ৩ লাখ ২৩ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছিল এবং বেকারত্বের হারও কমে ৪.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর প্রভাব বৈশ্বিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্সে পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দুর্বল হলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতেও তার প্রভাব পড়তে পারে। তাই, ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্ত এবং এর পরবর্তী গতিবিধি বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন