ঋণগ্রহীতাদের দুঃসংবাদ! সুদ কমানোর সম্ভাবনা কম, জানাচ্ছে ফেডারেল রিজার্ভ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, যা ‘ফেড’ নামে পরিচিত, সম্ভবত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এই নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো তারা তাদের প্রধান সুদের হারে কোনো পরিবর্তন আনবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে বিনিয়োগকারী এবং ঋণগ্রহীতারা এখন তাকিয়ে আছে ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের দিকে, বিশেষ করে তারা এই বছর সুদের হার কতোটা কমাবে সেই বিষয়ে তাদের পূর্বাভাস কী থাকে সেদিকে।

ফেডারেল রিজার্ভ সাধারণত মার্কিন অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। তাদের প্রধান কাজ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা।

সুদের হার কমানো বা বাড়ানোর মাধ্যমে তারা এই কাজটি করে থাকে। সুদের হার কমলে সাধারণত ঋণ নেওয়া সহজ হয়, যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। অন্যদিকে, সুদের হার বাড়ানো হলে তা মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ সম্ভবত এই বছর সুদের হার দু’বার কমাতে পারে। যদিও, এমনও কিছু অর্থনীতিবিদ আছেন যারা মনে করেন, এই দুটি কাটছাঁট ২০২৫ বা ২০২৬ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে।

ডিসেম্বর ও মার্চ মাসে ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা সুদের হার কমানোর বিষয়ে যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এবারও তেমনটাই দেখা যেতে পারে। বর্তমানে, ফেডারেল রিজার্ভের নিয়ন্ত্রিত স্বল্পমেয়াদী সুদের হার প্রায় ৪.৩ শতাংশে রয়েছে, যা তারা সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে কমিয়েছিল।

তবে, ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি দ্বিধা কাজ করছে। তারা মনে করছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং অন্যান্য নীতি পরিবর্তনের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।

যদিও, এপ্রিল মাসে ফেডারেল রিজার্ভের পছন্দের পরিমাপ অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি কমে ২.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন। খাদ্য ও জ্বালানি বাদে core inflation ছিল ২.৫ শতাংশ।

এই পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে, আপাতত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু ফেডারেল রিজার্ভের স্বল্পমেয়াদী সুদের হার এখনো বেশ উঁচুতেই রয়েছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতিকে ধীর করতে সহায়ক।

কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করায় ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানো শুরু করতে পারে।

ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমালে সাধারণত ভোক্তা এবং ব্যবসার জন্য ঋণের খরচ কমে আসে, যেমন – বন্ধকী ঋণ, গাড়ির ঋণ এবং ক্রেডিট কার্ডের সুদ ইত্যাদি। তবে, দীর্ঘমেয়াদী সুদের হারের ওপর আর্থিক বাজারের প্রভাবও থাকে।

অন্যদিকে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সুদের হার কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার কমালেও ফেডারেল রিজার্ভ তা করছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, ইউরোপ, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো সুদের হার কমিয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে তাদের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখনো বেশ স্থিতিশীল রয়েছে এবং বেকারত্বের হারও কম।

যুক্তরাজ্যের ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডও এই বছর দু’বার সুদের হার কমিয়েছে, কিন্তু তাদের আগামী বৈঠকে সুদের হার ৪.২৫ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক অফ জাপান, সম্প্রতি সুদের হার বাড়ানোর পর বর্তমানে তা ০.৫ শতাংশে স্থিতিশীল রেখেছে।

ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতটা পড়বে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে, বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।

বিশেষ করে, বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং টাকার বিনিময় হারে এর কিছু প্রভাব থাকতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *