শেয়ার বাজারে দারুণ সুখবর! সুদের হার কমার পর কি এই উল্লাস স্থায়ী হবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তের পরে দেশটির শেয়ার বাজারে দেখা দিয়েছে উচ্ছ্বাস। বিনিয়োগকারীরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, বাজারের এই তেজিভাব টেকসই নাও হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ফেডারেল রিজার্ভ, যা আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সম্প্রতি সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন, কারণ সুদের হার কমলে ঋণ নেওয়া সহজ হয় এবং ব্যবসার প্রসার ঘটে।

এর ফলস্বরূপ, ডাউ জোন্স, এসএন্ডপি ৫০০ এবং নাসডাকের মতো প্রধান শেয়ার সূচকগুলো নতুন রেকর্ড গড়েছে। এমনকি, ছোট কোম্পানির শেয়ারের সূচক, রাসেল ২০০০, যা সুদের হারের প্রতি সংবেদনশীল, ২০২১ সালের পর প্রথমবারের মতো নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও কিছু উদ্বেগের কারণ রয়েছে। একদিকে, মূল্যস্ফীতি এখনো একটি সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। অন্যদিকে, শ্রমবাজার দুর্বল হয়ে পড়লে ভোক্তাদের ব্যয় কমে যেতে পারে, যা ব্যবসার মুনাফাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও কোম্পানিগুলো এখনো পর্যন্ত শুল্কের প্রভাব ভালোভাবে সামাল দিয়েছে, তবে এর পুরো প্রভাব এখনো দেখা যায়নি।

নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ল্যারি হোয়াইট মনে করেন, বাজার অর্থনীতির দুর্বলতাগুলো বিবেচনায় না নিয়ে ঝুঁকিকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমার পরিচিত সবাই উদ্বিগ্ন, কিন্তু বাজার যেন অন্য কথা বলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের এই উত্থান বাংলাদেশের জন্য কি কোনো তাৎপর্য বহন করে? অবশ্যই করে।

কারণ, আমেরিকার অর্থনীতির যেকোনো পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে সুদের হার কমালে, তা বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।

অনেক বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন। তাদের জন্য এই ধরনের খবরগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, সুদের হারের পরিবর্তনের কারণে মার্কিন ডলারের বিনিময় হারেও পরিবর্তন আসতে পারে, যা আমদানি-রপ্তানির খরচকে প্রভাবিত করতে পারে।

তবে, বাজার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, বাজারের এই উত্থান দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। কারণ, শেয়ারের দাম এখন ঐতিহাসিক উচ্চতায় রয়েছে।

ব্যাংক অফ আমেরিকার জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে ৫8% বিনিয়োগকারী মনে করেন, শেয়ার বাজার অতিরিক্ত মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

জেপি মরগান অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বৈশ্বিক কৌশলবিদ ডেভিড কেলি বলেছেন, “বাজার এবং অর্থনীতির মধ্যে একটা বিভেদ তৈরি হয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা হয়তো শীঘ্রই কিছুটা সংশোধন দেখতে পারি।

ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর ফলে একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশা জেগেছে, তেমনি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাজারের মূল্যায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সতর্কবার্তা শোনা যাচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য তাই এখন সচেতন থাকা জরুরি। বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদেরও বাজারের এই গতিবিধির দিকে নজর রাখতে হবে এবং তাদের পোর্টফোলিও সে অনুযায়ী পুনর্বিন্যাস করতে হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *