মার্কিন অর্থনীতি: ফেডারেল মিটিংয়ে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ?!

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক: সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা ও বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) এই সপ্তাহে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মন্দাগ্রস্ত শ্রমবাজারকে সহায়তা করতে তারা সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বুধবার, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় এই ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন এক সময়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের নীতি এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।

এই পরিস্থিতিতে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি সহ বিশ্ব অর্থনীতির ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেডের এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল হতে থাকা শ্রমবাজার। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গ্রীষ্মকালে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কমে গেছে।

আগস্ট মাস পর্যন্ত গত তিন মাসে গড়ে মাত্র ২৯ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে কাজ খুঁজছেন এমন মানুষের সংখ্যা, শূন্যপদের তুলনায় বেশি।

বেকারত্বের সুবিধা চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যাও গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ফেডের কর্মকর্তারা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে মুদ্রাস্ফীতি সাময়িকভাবে বাড়লেও, তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তারা বিশ্বাস করেন, সুদের হার কমালে অর্থনীতির গতি কিছুটা বাড়ানো সম্ভব হবে।

তবে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীন নীতির বিরোধিতা করে আসছেন। তিনি সুদের হার কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন এবং ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের অপসারণের চেষ্টা করছেন।

এমনকি, বর্তমান গভর্নর জেইম পাওয়েল-কে বরখাস্ত করারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।

ট্রাম্পের এই চাপ সৃষ্টির মধ্যেই ফেডারেল রিজার্ভের বোর্ডে নতুন সদস্য হিসেবে স্টিফেন মিরানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মিরান ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

অনেকে মনে করছেন, মিরানের নিয়োগ ফেডের নীতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, মিরান বলেছেন, তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করবেন এবং অর্থনীতির বিষয়ে নিজস্ব মতামত দেবেন।

ফেডের এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য, সুদের হারের পরিবর্তন বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং মুদ্রাস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর ব্যতিক্রম নয়। সুদের হার কমালে, বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। তবে, এর ফলে পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।

ফেডের এই বৈঠকের ফলাফল এবং সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে, এর সফলতার জন্য নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *