ফেডারেল রিজার্ভ: পোশাকি অফিসের বদলে শ্রমিক বেশে

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) প্রধান কার্যালয়ের সংস্কার নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত এই অফিসের ২.৫ বিলিয়ন ডলারের সংস্কার কাজ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

সংস্কার কাজের ক্রমবর্ধমান খরচ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফেডারেল রিজার্ভের বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল।

জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাওয়েলকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন। কারণ হিসেবে তিনি সংস্কারের অতিরিক্ত খরচকে দায়ী করেন।

ট্রাম্পের অভিযোগ, পাওয়েল সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ফেডারেল রিজার্ভ একটি স্বাধীন সংস্থা, এবং প্রেসিডেন্টের সরাসরি হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা সীমিত।

তবে, কোনো গুরুতর অভিযোগ বা দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রেসিডেন্ট তাকে অপসারণ করতে পারেন।

এই পরিস্থিতিতে, ফেডারেল রিজার্ভ তাদের সংস্কার প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের একটি দল সেখানে নিয়ে যায়। সাংবাদিকদের ওই দলে ছিলেন এই লেখকও।

সংস্কার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে এবং এটি ২০২৭ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সাংবাদিকদের ভবনটির বিভিন্ন অংশ ঘুরিয়ে দেখানো হয়।

কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চান, যাতে হোয়াইট হাউজের সমালোচনা মোকাবেলা করা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সিনেট ব্যাংকিং কমিটির চেয়ারম্যান টিম স্কট সংস্কার প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয়ের সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, এতে রুফটপ টেরেস, ভিআইপি ডাইনিং রুম, সাদা মার্বেল এবং একটি ব্যক্তিগত আর্ট সংগ্রহশালা তৈরি করা হচ্ছে।

ফেডারেল রিজার্ভের কর্মীরা সাংবাদিকদের জানান, সেখানে ভিআইপি ডাইনিং রুম নয়, বরং কনফারেন্স রুম তৈরি করা হচ্ছে, যা মাঝে মাঝে খাবারের জন্য ব্যবহার করা হবে।

এছাড়া, প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বিশেষ লিফট এবং স্থানীয় একটি কমিশনের পরামর্শে কিছু সাদা মার্বেল যুক্ত করা হয়েছে।

সাংবাদিকরা যখন নির্মাণস্থল পরিদর্শন করেন, তখন তাঁরা ডাম্পস্টার ও পাইপ লাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে যান। কর্মীদের কথা শোনার জন্য তাঁদের নির্মাণ কাজের শব্দের সঙ্গে লড়তে হয়েছে।

এই প্রকল্পে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ শ্রমিক কাজ করছেন। সাংবাদিকদের ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান কার্যালয়, মারিনার এস. ইকলেস বিল্ডিংয়ের ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখান থেকে লিঙ্কন মেমোরিয়াল, ন্যাশনাল মল এবং ওয়াশিংটন ডিসির কিছু অংশ দেখা যায়।

ফেডারেল রিজার্ভের কর্মীরা জানান, ছাদে কোনো রুফটপ টেরেস তৈরি করা হচ্ছে না, বরং ঘাস এবং অন্যান্য গাছপালা দিয়ে একটি ‘গ্রিন রুফ’ তৈরি করা হবে, যা শীতলীকরণ খরচ কমাবে এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে সাহায্য করবে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, তাঁরা মূলত কিছু অনিবার্য খরচের সম্মুখীন হয়েছেন, যেমন—বিস্ফোরণ প্রতিরোধী জানালা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আধুনিক ইলেকট্রনিকস এবং এইচভিএসি সিস্টেম, এবং ঐতিহাসিক সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে।

নির্মাণ শ্রমিকরা সিঁড়ি এবং দেয়াল রক্ষার জন্য ব্যাপক পরিমাণে প্লাইউড ব্যবহার করেছেন, যা ট্রাম্পের সমালোচনার কারণ হয়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও সংস্কারকাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্লাইউডের সুরক্ষা বাবদ অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আমার মনে হয়, কাজটি আরও সহজে এবং কম খরচে করা যেত।’

ফেডারেল রিজার্ভের সংস্কার একটি বিশাল প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য দুটি ভবনের মধ্যে সংযোগকারী রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এর নিচে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এবং দুটি সংস্কারকৃত ভবনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হবে। ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংস্কার সম্পন্ন হলে তাঁরা তাঁদের ৩,০০০ কর্মীর জন্য আরও বেশি জায়গা পাবেন এবং ভাড়াকৃত অফিসের স্থান হ্রাস করতে পারবেন।

ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘খরচ অনেক বেড়েছে, তবে ইতিবাচক দিক হলো, আমাদের দেশ ভালো করছে এবং যেকোনো কিছুই বহন করতে পারে—এমনকি এই ভবনের খরচও!’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ যদি শীঘ্রই সুদের হার কমায়, তাহলে ট্রাম্পের অসন্তুষ্টি কমে আসতে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *