মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় (Government Shutdown) সেখানকার ফেডারেল কর্মীরা এক নতুন উদ্বেগের মধ্যে পড়েছেন।
যারা এখনো কাজে বহাল রয়েছেন, তাদের ছুটি পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। অনেক কর্মী ছুটি নিলে চাকরি হারানোর ভয়ে ভীত, আবার কারো কারো আশঙ্কা, ছুটির কারণে তাদের কর্মজীবনে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে অর্থ বরাদ্দের বিল পাশ না হওয়ায় গত ১ অক্টোবর থেকে এই অচলাবস্থা শুরু হয়েছে।
এর ফলে, জরুরি বিভাগের কর্মীরাও ছুটি নিতে দ্বিধা বোধ করছেন।
কারো কারো মতে, ছুটি নিলে তাদের অনুপস্থিতিকে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে, যা আগে কখনো ঘটেনি। এমন পরিস্থিতিতে কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ।
সোস্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসএসএ)-এর একজন কর্মী জানান, তিনি অক্টোবর মাসের শুরুতে একটি অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করেছিলেন।
কিন্তু সরকারি অচলাবস্থার কারণে, তিনি সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হন। কারণ, অস্ত্রোপচারের জন্য তার দুই সপ্তাহের ছুটি দরকার ছিল।
তিনি আশঙ্কা করছিলেন, ছুটি নিলে হয়তো তার চাকরি চলে যেতে পারে। ওই কর্মীর কথায়, “এই মুহূর্তে ছুটি নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।
ছুটি নিলে যদি চাকরি চলে যায়, সেই ঝুঁকি আমি নিতে পারি না।”
ফেডারেল এজেন্সিগুলোতে কর্মরত কর্মীদের অনেকে জানিয়েছেন, তারা ছুটি নিতে ভয় পাচ্ছেন অথবা তাদের বলা হয়েছে যে এই পরিস্থিতিতে ছুটি মঞ্জুর করা হবে না।
এছাড়া, ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাই করারও একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, কর্মীদের বকেয়া বেতন পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের (ভিএ) একজন কর্মী জানান, তার সুপারভাইজার তাকে ছুটি নেওয়ার ব্যাপারে পুনরায় ভেবে দেখতে বলেছিলেন, যা আগে কখনো হয়নি।
যদিও তিনি ছুটি বাতিল করেননি, তবুও ছুটির দিনগুলোর বেতন পাওয়া যাবে কিনা এবং তার অনুপস্থিতি তার ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন, তাদের সুপারভাইজাররা বলেছেন, কাজে অনুপস্থিত থাকলে তাদের চাকরি চলে যেতে পারে।
অতীতে এমনটা ঘটেনি, তবে এবার কর্মীদের ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে চিহ্নিত করার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের স্থানীয় শাখার প্রধান জোয়েল স্মিথ বলেন, “কর্মীরা এখন তাদের স্বাস্থ্য এবং চাকরির মধ্যে একটি বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি কাজকর্ম বন্ধ থাকার সময় জরুরি বিভাগের কর্মীদের ছুটি নেওয়াটা কোনো অপরাধ নয়।
তবে, তাদের কর্মজীবনে এর খারাপ প্রভাব ফেলাটা কর্মীদের প্রতি ‘অবিচার’-এর শামিল।
অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (আইআরএস)-এর আটলান্টা অফিসের কর্মীরা তাদের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ছুটি সংক্রান্ত বিষয়ে পরস্পরবিরোধী নির্দেশনা পেয়েছেন।
কর্মীদের বলা হয়েছে, জরুরি বিভাগের কর্মীরা ছুটি বা মেডিকেল ছুটি নিতে পারবেন না।
এমনকি, অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসার জন্য ছুটি নিলেও, তাকে ‘অনুপস্থিত’ হিসেবে গণ্য করা হবে।
তবে, কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে অফিসের পরিচালক জানান, জরুরি কর্মীরা তাদের ম্যানেজারের অনুমোদন নিয়ে ছুটি নিতে পারবেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন