ফেডএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেড স্মিথ, যিনি ছিলেন বিশ্বব্যাপী দ্রুতগতির পণ্য পরিবহনের পথিকৃৎ, ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার হাত ধরেই গড়ে উঠেছিল এই অত্যাধুনিক পরিষেবা, যা ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জিনিসপত্র পাওয়ার ধারণাই বদলে দিয়েছে।
ফ্রেড স্মিথ-এর জন্ম ১৯৪৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের মার্কস-এ। তিনি ছিলেন একাধারে একজন উদ্ভাবক এবং সফল উদ্যোক্তা। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি দ্রুত গতির পণ্য সরবরাহ করার ধারণা নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যা পরবর্তীতে ফেডএক্স-এর জন্ম দেয়। যদিও সেই সময়ে তার শিক্ষক এই প্রবন্ধটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি।
১৯৭১ সালে, তিনি ‘ফেডারেল এক্সপ্রেস’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এর কার্যক্রম শুরু হয় আরকানসাসের লিটল রকে। ১৯৭৩ সালে মেমফিসে কোম্পানিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে, যেখানে ১৪টি বিমানের বহর নিয়ে ৩৮৯ জন কর্মী কাজ করতেন এবং তারা ২৫টি শহরে দিনে ১৮৬টি পার্সেল পৌঁছে দিতেন। এরপর ধীরে ধীরে ফেডএক্স-এর প্রসার ঘটতে থাকে।
সময়ের সাথে সাথে, ফেডএক্স আন্তর্জাতিকভাবে তাদের কার্যক্রম বাড়াতে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও গ্রাউন্ড সার্ভিস চালু করে। ফেডএক্স-এর অধীনে ‘ফেডএক্স গ্রাউন্ড’ এবং ‘ফেডএক্স ফ্রেইট’-এর মতো বিভাগ তৈরি হয়, যা পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এছাড়াও, ফেডএক্স কিঙ্কো’স-এর মতো কপি সেন্টার কিনে সেগুলোকে ফেডএক্স অফিস হিসেবে নতুন করে সাজায়।
ফেডএক্স-এর সাফল্যের পেছনে ফ্রেড স্মিথের দূরদৃষ্টি ও কঠোর পরিশ্রম ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২০০২ সালে তিনি যখন সিইও পদ থেকে অবসর নেন, তখন কর্মীদের উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, “আমরা একটি ছোট স্টার্টআপ ছিলাম, আমাদের অনেক সমালোচক ছিল।
কিন্তু প্রথম দিনের কার্যক্রমের মাধ্যমেই বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, যা আমাদের বিশ্বকে আরও উন্নত করেছে।” সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও, স্মিথ ফেডএক্সের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
ফেডএক্স-এর যাত্রা শুরুর আগে স্মিথ মার্কিন মেরিন কোরে চার বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধেও অংশ নেন। তার এই অভিজ্ঞতা তাকে পরবর্তী জীবনে কোম্পানি পরিচালনায় অনেক সাহায্য করেছে।
বর্তমানে ফেডএক্স প্রায় ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে, যা বিশ্বের প্রায় ২২০টি দেশে তাদের পরিষেবা প্রদান করে। ফ্রেড স্মিথের প্রয়াণে বিশ্ব বাণিজ্য এবং পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
তথ্য সূত্র: সিএনএন
