ইউরোপের সড়ক ও রেল যোগাযোগের মানচিত্র বদলে দিতে ডেনমার্ক ও জার্মানির মধ্যে নির্মিত হচ্ছে বিশাল এক সমুদ্রগর্ভ টানেল। ফেমার্নবেল্ট টানেল নামের এই প্রকল্পটি শুধু প্রকৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্বও অপরিসীম।
এটি সম্পন্ন হলে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
ফেমার্নবেল্ট টানেলটি তৈরি হচ্ছে বাল্টিক সাগরের নিচে, যা ডেনমার্কের লোয়াল্যান্ড দ্বীপ এবং জার্মানির ফেমার্ন দ্বীপকে সংযুক্ত করবে। টানেলটি হবে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ, যেখানে দুটি ডোবল লেনের সড়ক এবং দুটি বৈদ্যুতিক রেললাইন স্থাপন করা হবে।
এই সুড়ঙ্গপথ তৈরি করা হচ্ছে সমুদ্রের তলদেশে বসানো কংক্রিটের বিশাল সব খণ্ড জোড়া লাগিয়ে। এটিকে বলা হচ্ছে ‘ইমার্সড টানেল’। এর আগে, ব্রিটেনের সঙ্গে ফ্রান্সের সংযোগ স্থাপনকারী চ্যানেল টানেল ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
তবে ফেমার্নবেল্ট টানেল আকারে তার চেয়েও বড়।
টানেল তৈরির জন্য ব্যবহৃত কংক্রিটের প্রতিটি খণ্ড তৈরি করা হচ্ছে বিশেষ কারখানায়। প্রতিটি খণ্ডের দৈর্ঘ্য ২১৭ মিটার, প্রস্থ ৪২ মিটার এবং গভীরতা ৯ মিটার।
এগুলোর ওজন প্রায় ৭৩ হাজার টন, যা ১০টি আইফেল টাওয়ারের সমান। কারখানাটি তৈরি করা হয়েছে বিশেষভাবে, যেখানে একসঙ্গে অনেকগুলি খণ্ড তৈরির ব্যবস্থা রয়েছে।
বর্তমানে, প্রতি ৯ সপ্তাহে একটি করে বিশাল কংক্রিট খণ্ড তৈরি হচ্ছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডেনমার্কের রডবিhavn থেকে প্রথম কংক্রিট খণ্ডটি তৈরি হয়ে সমুদ্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে।
২০২৯ সাল নাগাদ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
টানেল নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছে ৭.৪ বিলিয়ন ইউরো বা প্রায় ৭.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এটি শুধু একটি সুড়ঙ্গপথ নয়, বরং বিশাল কর্মযজ্ঞ। ফেমার্নবেল্ট টানেল নির্মাণের ফলে ডেনমার্ক ও জার্মানির মধ্যে ভ্রমণ সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
বর্তমানে, ফেরিতে করে দুই দেশের মধ্যে যেতে সময় লাগে ৪৫ মিনিট, যা টানেলের মাধ্যমে সড়ক পথে ১০ মিনিটে এবং রেলপথে মাত্র ৭ মিনিটে সম্পন্ন করা যাবে।
হামবুর্গ থেকে কোপেনহেগেন পর্যন্ত ট্রেনের যাত্রা প্রায় অর্ধেক সময়ে নেমে আসবে।
এই প্রকল্পের ফলে ডেনমার্ক এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে পর্যটনের ব্যাপক উন্নতি ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জার্মানি থেকে আসা পর্যটকদের জন্য ডেনমার্কের আকর্ষণ আরও বাড়বে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পর্যটকদের সুবিধার জন্য অবকাঠামো উন্নয়নেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
তবে, এমন বৃহৎ প্রকল্পের পরিবেশের উপর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে খনন কাজ থেকে প্রাপ্ত ১৫ মিলিয়ন ঘনমিটার সমুদ্রের তলদেশের মাটি লোয়াল্যান্ড ও ফেমার্নে নতুন করে ভরাট করা হচ্ছে, যেখানে ভবিষ্যতে জলাভূমি তৈরি করা হবে।
ফেমার্ন এ/এস (Femern A/S), ডেনমার্কের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পরিবেশ সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ এবং তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিবর্তে নতুন প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করছে।
ফেমার্নবেল্ট টানেল শুধু ইউরোপের যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে না, বরং এটি বিশ্বজুড়ে প্রকৌশল এবং অবকাঠামো উন্নয়নে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন