যুদ্ধকালীন সময়ে ব্রিটেনের নারী শিল্পীদের অবদান আজও অনেকের কাছে অজানা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাধা ও যুদ্ধের বিভীষিকা সত্ত্বেও তাঁরা তাঁদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং সমাজের প্রতিচ্ছবি।
সম্প্রতি তাঁদের কাজগুলো আবারও আলোচনায় এসেছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ এবং এর প্রভাব চিত্রিত করার জন্য শিল্পী নিয়োগ করে। কিন্তু নারী শিল্পীদের এই সুযোগ খুব কমই দেওয়া হতো।
তাঁদের কাজ মূলত হাসপাতালের আহত সৈনিক অথবা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার চিত্র আঁকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, কয়েকজন সাহসী নারী শিল্পী তাঁদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে যুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তুলেছিলেন।
ডরিস জিংকেইসেন ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বার্গেন-বেলসেন বন্দীশিবিরে প্রবেশ করেন এবং সেখানকার ভয়াবহ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেন।
তাঁর আঁকা ‘হিউম্যান লন্ড্রি’ (Human Laundry) ছবিতে দেখা যায়, রোগা মানুষদের পরিষ্কার করছেন সেবিকা। জিংকেইসেন ছিলেন রয়্যাল অ্যাকাডেমির ছাত্রী এবং ব্রিটিশ রেড ক্রসের হয়ে কাজ করতেন।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, তাঁর কাজগুলো যেন অনেকটাই বিস্মৃতির অতলে চলে গিয়েছিল। সম্প্রতি, ভিই ডে’র (VE Day – Victory in Europe Day) ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে।
যুদ্ধকালীন সময়ে শিল্পচর্চা করা নারীদের মধ্যে র্যাচেল রেকুইট ছিলেন অন্যতম। তিনি ব্লিৎজ চলাকালীন সময়ে বোমা হামলায় ধ্বংস হওয়া বাড়িঘরের ছবি আঁকতেন।
তাঁর কাজের মাধ্যমে যুদ্ধের বিভীষিকা গভীরভাবে ফুটে উঠেছিল। গ্ল্যাডিস হাইনস-এর ‘ক্রুসিফিক্সন’ (Crucifixion) ছবিতে একজন বিমানসেনাকে বিমানের ধ্বংসাবশেষের ওপর শুয়ে থাকতে দেখা যায়, যা যুদ্ধের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়।
প্রিসিলা থর্নিক্রফ্ট স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী পোস্টার তৈরি করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই গোপনে ছবি আঁকতেন।
তাঁর ‘রানওয়ে হর্স’ (Runaway Horse) ছবিতে বোমারু বিমানের শব্দে ভীত একটি ঘোড়াকে দৌড়াতে দেখা যায়, যা যুদ্ধের বিভীষিকা ফুটিয়ে তোলে।
যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে শিল্পী ওলগা লেম্যানের (Olga Lehmann) বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এরপরে তিনি যুদ্ধের বিভীষিকা চিত্রিত করতে উৎসাহিত হন।
তিনি লন্ডনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার স্কেচ তৈরি করেন এবং পরে একটি গোপন কারখানায় যুদ্ধের চিত্রকর্ম তৈরি করার দায়িত্ব পান।
যুদ্ধের পর, তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন এবং বিভিন্ন বিখ্যাত ছবিতে কাজ করেন।
বর্তমানে, ‘ওয়ার পেইন্ট – উইমেন অ্যাট ওয়ার’ (War Paint – Women at War) নামের একটি প্রামাণ্যচিত্র মুক্তি পেয়েছে, যেখানে এই নারী শিল্পীদের কাজ তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া, তাঁদের কাজগুলো জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রদর্শনী ও আয়োজন করা হচ্ছে। তাঁদের এই শিল্পকর্মগুলো শুধু যুদ্ধের ইতিহাসকেই তুলে ধরে না, বরং সমাজের প্রতি তাঁদের গভীর উপলব্ধির প্রমাণও দেয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান