স্কুলের গোপনীয়তা: অভিভাবকদের আড়ালে কি চলছে?

শিক্ষার্থীদের গোপনীয়তা রক্ষা, নাকি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন? বিদ্যালয় কিভাবে ব্যবহার করে, অথবা অপব্যবহার করে, ৫০ বছর পুরোনো একটি আইনের, যা হয়তো আপনি জানেন না।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং তাদের সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করা নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক দেখা যায়। বিশেষ করে, যখন কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয় কোনো শিক্ষার্থী, অথবা বিদ্যালয়ের পরিবেশে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তখন অভিভাবকদের জানার আগ্রহ থাকে।

কিন্তু অনেক সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি আইনের অজুহাত দেখিয়ে তথ্য গোপন করে থাকে। এই আইনটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফ্যামিলি এডুকেশনাল রাইটস অ্যান্ড প্রাইভেসি অ্যাক্ট’ (FERPA), যা ১৯৭৪ সালে প্রণীত হয়েছিল।

সম্প্রতি, এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে এক ছাত্র খেলার মাঠে গুরুতর আহত হলেও তার পরিবার ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারেনি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করলে শিক্ষার্থীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবে।

আবার, কোনো শিক্ষার্থীর মাদক গ্রহণের ঘটনার খবর অভিভাবকদের জানানোর জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ থাকলেও, FERPA-র অজুহাত দেখিয়ে অনেক বিদ্যালয় তা মানতে রাজি হয়নি।

এই FERPA আইনটি আসলে কী? এটি কি সত্যিই শিক্ষার্থীদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য, নাকি অনেক সময় বিদ্যালয়গুলো নিজেদের দায় এড়াতে এটির অপব্যবহার করে?

যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক লোমন্ট এর মতে, FERPA একটি ভালো উদ্দেশ্যে তৈরি হলেও, বর্তমানে এর প্রয়োগে অনেক ত্রুটি দেখা যায়। তিনি জানান, এই আইনটি মূলত বিদ্যালয়ে কর্মরত মনোবিদ এবং থেরাপিস্টদের কাছে আসা শিক্ষার্থীদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

কিন্তু বর্তমানে, অনেক বিদ্যালয় এটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে তথ্য গোপন করার কাজে ব্যবহার করে।

লোমন্টের মতে, FERPA বিদ্যালয়গুলোকে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষার্থীর গোপন রেকর্ড প্রকাশ করতে বাধা দেয়। তবে, তথ্য প্রকাশ না করার কারণে কোনো বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।

এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অনেক বিদ্যালয় অভিভাবকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করে। উদাহরণস্বরূপ, খেলার মাঠে আহত এক শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছিল, কারণ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করে, এতে অন্য শিক্ষার্থীদের গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে।

FERPA-র মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে, অনেক বিদ্যালয় এই আইনের ভুল ব্যাখ্যা করে এমন সব তথ্য গোপন করে, যা জানা অভিভাবকদের জন্য জরুরি।

ফ্রাঙ্ক লোমন্টের মতে, এর প্রধান কারণ হলো, অনেক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই এবং তারা ভুলের ঝুঁকি নিতে চায় না।

এছাড়াও, বিদ্যালয়গুলো তাদের সুনাম রক্ষার জন্য তথ্য গোপন করতে বেশি আগ্রহী।

তাহলে, এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের করণীয় কী? ফ্রাঙ্ক লোমন্ট মনে করেন, তথ্য পাওয়ার জন্য অভিভাবকদের আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া তেমন কোনো উপায় নেই।

তবে, এতে অনেক সময় ও অর্থ খরচ হয়।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যদি বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে শিক্ষার্থীদের গোপনীয়তা রক্ষার পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।

কারণ, বিদ্যালয়ে ঘটা কোনো ঘটনা কেবল শিক্ষার্থীর একার বিষয় নয়, এটি পুরো সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ভবিষ্যতে এমন একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের গোপনীয়তা রক্ষার পাশাপাশি অভিভাবকদের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করবে।

একইসঙ্গে, বিদ্যালয়গুলোকে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বাধ্য করবে, যা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *