বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষ তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক সন্তান জন্ম দিতে পারছেন না। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) এবং গবেষণা সংস্থা YouGov ১৪টি দেশের মানুষের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। এতে জানা গেছে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে আর্থিক অনটন একটি বড় বাধা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে প্রায় এক পঞ্চমাংশ মনে করেন, তাঁরা যতজন সন্তান নিতে চান, ততজন নিতে পারবেন না। আর্থিক সীমাবদ্ধতাকে এই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রায় ৩৯ শতাংশ মানুষ।
এরপরেই রয়েছে কর্মসংস্থান এবং আবাসনের অভাবের মতো বিষয়গুলো।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক নারী-পুরুষ ভবিষ্যতের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ এবং মহামারীর মতো বিষয়গুলো তাঁদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে।
মেক্সিকোর ২৯ বছর বয়সী একজন নারী জরিপে বলেছেন, “আমি সন্তান নিতে চাই, কিন্তু সময় যত যাচ্ছে, এটি কঠিন হয়ে পড়ছে। আমার শহরে বসবাস করা বা একটি সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ি ভাড়া করা অসম্ভব।
আমি এমন এক পরিস্থিতিতে সন্তানের জন্ম দিতে চাই না, যেখানে যুদ্ধ চলছে এবং পৃথিবীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে শিশুর কষ্ট হবে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে উপযুক্ত সঙ্গীর অভাব এবং শিশুদের দেখাশোনার সুযোগের অভাবও এর কারণ।
UNFPA-এর নির্বাহী পরিচালক ড. নাটালিয়া কানেম বলেছেন, “মূল সমস্যা হল পছন্দের অভাব। এর গুরুতর প্রভাব ব্যক্তি এবং সমাজের উপর পড়ছে।
সঠিক সমাধান হল – পরিবার-বান্ধব ছুটি, সাশ্রয়ী মূল্যের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এবং সমর্থনকারী অংশীদারদের ব্যবস্থা করা।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অনেক নারী অপ্রত্যাশিতভাবে গর্ভবতী হচ্ছেন। মরক্কোতে এই সংখ্যা ৫১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকার এবং সমাজের পক্ষ থেকে প্রায়শই ব্যক্তির চাহিদার চেয়ে জাতীয় বা সামাজিক প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অনেক দেশে গর্ভপাতকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। আবার কিছু দেশে, যেমন জাপানে, স্বেচ্ছায় বন্ধ্যাত্বকরণ সীমিত করা হয়েছে।
নাইজেরিয়ার এক-দশমাংশের বেশি নারী-পুরুষ তাঁদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা সেবার অভাব এর অন্যতম কারণ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ প্রতিরোধ এবং পরিকল্পিত গর্ভধারণ উভয়ই মানুষের অধিকার ও কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উভয় ক্ষেত্রেই সহায়ক পরিবেশ, নীতি এবং রীতিনীতি প্রয়োজন।”
জরিপে অংশ নেওয়া ১৪টি দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, হাঙ্গেরি, জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নাইজেরিয়া।
এই দেশগুলো বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি প্রতিনিধিত্ব করে। জরিপে ১৮ থেকে ৮৮ বছর বয়সী ১৪,০০০ এর বেশি মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র: CNN