মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একটি অত্যাধুনিক এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট যুদ্ধবিমান লোহিত সাগরে ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান বিমানবাহী রণতরীতে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। মঙ্গলবার সংঘটিত হওয়া এই ঘটনায় বিমানের দুই পাইলট অল্প আঘাত পেলেও প্রাণে বেঁচে যান।
বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় এমনটা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিমানটি অবতরণের সময় ‘অ্যারেস্টমেন্ট’ ব্যবস্থা, যা বিমানের ল্যান্ডিংয়ের জন্য জরুরি, সেটি কাজ করেনি। এর ফলে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাগরে পড়ে যায়।
সৌভাগ্যবশত, পাইলটরা সময় থাকতে প্যারাসুটের মাধ্যমে বিমান থেকে বের হয়ে আসেন। পরে তাদের উদ্ধার করা হয় এবং তারা সামান্য আহত হয়েছেন।
এই ঘটনায় বিমানের ফ্লাইট ডেক-এ থাকা অন্য কেউ হতাহত হয়নি।
লোহিত সাগরে বর্তমানে উত্তেজনা বিরাজ করছে, কারণ ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা বাণিজ্যিক জাহাজ ও সামরিক নৌযানের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান বিমানবাহী রণতরী ওই অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে এবং হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এই ঘটনার আগে, এপ্রিল মাসেও ট্রুম্যান থেকে একটি এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান সাগরে পড়ে গিয়েছিল। এছাড়া, ডিসেম্বর মাসে ইউএসএস গেটিসবার্গ নামের একটি গাইডেড-মিসাইল ক্রুজার ভুল করে একটি এফ/এ-১৮ বিমান ভূপাতিত করে।
ফেব্রুয়ারিতে ট্রুম্যান মিশরের পোর্ট সাঈদের কাছে একটি বাণিজ্যিক জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যুদ্ধবিমানটির আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকার সমান।
হুতি বিদ্রোহীরা গাজা উপত্যকায় হামাস-এর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। তারা এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একশোর বেশি বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এতে দুটি জাহাজ ডুবে যায় এবং চারজন নাবিকের মৃত্যু হয়। এই হামলার কারণে লোহিত সাগর দিয়ে পণ্য পরিবহনে ব্যাপক বাধা সৃষ্টি হয়েছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ।
সাধারণত, এই করিডোর দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য পরিবহন করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি হুতি বিদ্রোহীদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ শুরু করেছে। এর আগে, বিদ্রোহীরা একটি স্ব-আরোপিত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল।
এই ঘটনার পর, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে এবং লোহিত সাগরে নৌ চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস