ফিজির আকর্ষণীয় দ্বীপগুলিতে এখন পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে, আর এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে এক নতুন উদ্যোগ— পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকার। ‘লোলোমা আওয়ার’ নামের এই প্রকল্পে পর্যটকদের ভ্রমণের সময় থেকে এক ঘণ্টা পরিবেশ সুরক্ষার কাজে ব্যয় করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে প্রতি বছরই বাড়ছে পর্যটকদের সংখ্যা। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ফিজিতে প্রথমবারের মতো প্রায় ১০ লক্ষ পর্যটকের আগমন ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। ডালাস থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ায় এখন আমেরিকান পর্যটকদের জন্য দেশটি ভ্রমণ করা আরও সহজ হয়েছে।
ভ্রমণের আনন্দ, নতুন দিগন্তের উন্মোচন এবং স্মৃতিগুলো অমূল্য, তবে এর কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনার কারণে কার্বন নিঃসরণ বাড়ে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও, ফিজিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর ‘কাকাউলেভু’র ক্ষতি একটি উদ্বেগের বিষয়।
‘লোলোমা আওয়ার’-এর মাধ্যমে, ফিজির সরকার পর্যটন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করতে চাইছে। পর্যটকদের মধ্যে ভ্রমণের সময় আনন্দ এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়, যা এই প্রকল্পের সাফল্যের চাবিকাঠি। এর মাধ্যমে পর্যটকদের একটি অংশীদারিত্বের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের সমুদ্র সৈকতের সাধারণ ভ্রমণের বাইরে গিয়ে কিছু করার অনুপ্রেরণা যোগায়।
ট্যুরিজম ফিজির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শ্রীষ্টি নারায়ণ জানান, “কোভিড-১৯ মহামারীর পর পর্যটকদের আচরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। এখন মানুষ আরও অর্থপূর্ণ ও দায়িত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা চাইছে, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
পর্যটকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই প্রকল্পের ধারণা তৈরি হয়েছে। যদিও পর্যটকেরা আগে থেকেই বিভিন্নভাবে ফিজির উন্নয়নে অবদান রাখতেন, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ এই প্রথম।
ইতিমধ্যে, বিভিন্ন রিসোর্ট, হোটেল এবং ট্যুর অপারেটরসহ ২০টির বেশি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে। এই অংশীদাররা পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় এবং উপভোগ্য কার্যক্রমের ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, উপকূলীয় অঞ্চলের পরিচ্ছন্নতা এবং প্রবাল প্রাচীরের যত্ন নেওয়া।
‘লোলোমা আওয়ার’-এর অংশ হিসেবে, পর্যটকেরা কোকোমো প্রাইভেট আইল্যান্ডে স্থানীয় সমুদ্র জীববিজ্ঞানী দ্বারা পরিচালিত কোরাল গার্ডেনিং, ভিয়ানি বে রিসোর্টে লবণ ও তেল তৈরির প্রক্রিয়া পরিদর্শন, শাংরি-লা ইয়ানুকা আইল্যান্ডে ম্যানগ্রোভ বনায়ন, সিক্স সেন্সেস ফিজিতে ফিজিয়ান ক্রেস্টেড ইগুয়ানা গণনা ও সংরক্ষণ, বারেফুট কুয়াটা আইল্যান্ড রিসোর্টে হাঙ্গর দেখা এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল ফিজি গল্ফ রিসোর্ট ও স্পা-তে সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার করার মতো বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন।
ফিজির লক্ষ্য হলো, পর্যটকদের কাছ থেকে পাওয়া এক ঘণ্টার এই সময়কে কাজে লাগিয়ে পরিবেশের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া। শ্রীষ্টি নারায়ণ আরও বলেন, “এই উদ্যোগ শুধু এক ঘণ্টার জন্য নয়, বরং এটি একটি মানসিকতার জন্ম দেয়।”
এই প্রকল্পের অধীনে আরও বেশি সংখ্যক সহযোগী যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং প্রথম বছরেই ফিজির আশা, পরিবেশ সুরক্ষায় প্রায় ৫,০০০ ঘণ্টা ব্যয় করা হবে। পর্যটকদের প্রত্যাশা, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা দেশটির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে, যা তাদের ভ্রমণের স্মৃতিকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করবে।
‘লোলোমা আওয়ার’ ফিজির পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকারের প্রতীক, যা একই সঙ্গে পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করবে। বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীরা পরিবেশ সুরক্ষায় তাদের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হবে। শ্রীষ্টি নারায়ণের মতে, “আমরা চাই, এই ধরনের কার্যক্রম অন্যান্য দ্বীপ রাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়ুক, যা আমাদের সংস্কৃতি, মানুষ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করবে।”
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার