টাকা-পয়সার চিন্তা? বিপদ থেকে বাঁচতে এখনই করুন এই কাজ!

আজকের অস্থির অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে, নিজের আর্থিক সুরক্ষার পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। একদিকে যেমন বিশ্বজুড়ে মূল্যবৃদ্ধি, তেমনই বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত ঘটনা—যেমন স্বাস্থ্য সমস্যা অথবা অপ্রত্যাশিত ক্ষতি—আমাদের জীবনে আসতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে, একটি সুচিন্তিত আর্থিক পরিকল্পনা আমাদের এবং আমাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কিভাবে একটি ‘জরুরি অবস্থার জন্য’ আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করা যায়।

প্রথমেই, আপনার ব্যয়ের হিসাব রাখা দরকার।

অর্থনীতিবিদ এবং আর্থিক পরিকল্পনাকারীরা প্রায়শই পরামর্শ দেন, অর্থনীতির বৃহত্তর চিত্র নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বরং নিজের ব্যক্তিগত আর্থিক পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দিতে। আপনার পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচগুলো চিহ্নিত করুন।

যেমন – বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, খাদ্য, স্বাস্থ্য খরচ এবং ঋণের কিস্তি। এই প্রয়োজনীয় খরচগুলোর হিসাব রাখলে বোঝা যাবে, জরুরি অবস্থার জন্য ঠিক কত টাকা সঞ্চয় করা প্রয়োজন।

সাধারণত, এই ধরনের জরুরি অবস্থার জন্য তিন মাস থেকে এক বছরের খরচ বাঁচিয়ে রাখা ভালো। এই সঞ্চয় আপনাকে চাকরি চলে গেলে বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার মোকাবিলায় সাহায্য করবে।

দ্বিতীয়ত, আপনার বীমা পলিসিগুলো পর্যালোচনা করুন।

জীবন, স্বাস্থ্য, এবং সম্পত্তির বীমা—এগুলো আর্থিক সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অসুস্থতা, অক্ষমতা, এমনকি মৃত্যুর মতো ঘটনাগুলো আর্থিক দিক থেকে পরিবারের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

তাই, আপনার বীমা কভারেজ পর্যাপ্ত কিনা, তা নিশ্চিত করা দরকার। আপনার যদি পরিবার থাকে এবং আপনি পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী হন, তাহলে জীবন বীমা অপরিহার্য।

একইভাবে, স্বাস্থ্য বীমা আপনাকে অপ্রত্যাশিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খরচের হাত থেকে রক্ষা করবে। এছাড়াও, আপনার বাড়ি বা সম্পত্তির জন্য পর্যাপ্ত বীমা আছে কিনা, তা দেখে নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের বীমা পলিসি প্রচলিত আছে, তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পলিসি বেছে নিতে পারেন।

তৃতীয়ত, আপনার বিনিয়োগের ঝুঁকি পর্যালোচনা করুন।

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ লাভজনক হতে পারে, তবে এতে ঝুঁকিও থাকে। আপনার বয়স, আর্থিক লক্ষ্য এবং ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা উচিত।

বিনিয়োগের ঝুঁকি নির্ধারণ করার সময়, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যারা এখনো তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সঞ্চয় করছেন, তাদের জন্য ঝুঁকি-সহ বিনিয়োগ (যেমন – শেয়ার বাজার) ভালো ফল দিতে পারে।

তবে, যারা ইতিমধ্যে অবসর গ্রহণের কাছাকাছি, তাদের জন্য ঝুঁকি কমিয়ে স্থিতিশীল বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

চতুর্থত, আপনার সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন।

দুর্ভাগ্যজনক কোনো ঘটনার পরে আপনার পরিবার যেন আর্থিক দিক থেকে সমস্যায় না পড়ে, সেজন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বীমা পলিসি, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক তথ্যের একটি তালিকা তৈরি করুন। এই তালিকাটি একটি সুরক্ষিত স্থানে রাখুন, যা আপনার পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে।

আপনার মৃত্যুর পর আপনার সম্পদ কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।

আর্থিক পরিকল্পনা একটি চলমান প্রক্রিয়া।

সবকিছু একসঙ্গে করার চেষ্টা না করে, ধীরে ধীরে পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন। ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন এবং প্রতিটি সফলতার জন্য নিজেকে উৎসাহিত করুন।

মনে রাখবেন, আর্থিক পরিকল্পনা আপনার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *