বর্তমান ডিজিটাল যুগে আর্থিক প্রতারণা বাড়ছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। ইন্টারনেট, সামাজিক মাধ্যম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে প্রতারকরা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে, যা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত বছর সাইবার অপরাধের মাধ্যমে প্রায় ১৬.৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির শিকার হয়েছে মানুষ, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষতি হয়েছে আর্থিক প্রতারণার কারণে।
প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। ফেডারেল ট্রেড কমিশন (FTC) জানিয়েছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে ১০,০০০ ডলার বা তার বেশি হারানোর অভিযোগ চারগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি, এক শ্রেণির মানুষ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং সঞ্চয় ভেঙে ফেলেছে বলেও জানা গেছে।
প্রতারকরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণা বা ইম্পোস্টার স্ক্যাম। এক্ষেত্রে, তারা সরকারি সংস্থা বা কোনো পরিচিত কোম্পানির প্রতিনিধি সেজে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
অনেক সময় তারা ভুক্তভোগীকে দ্রুত টাকা সরানোর জন্য চাপ দেয়, যেমন – ‘আপনার অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে হবে’। এছাড়াও, তারা আকর্ষণীয় অফার দেয়, যা আসলে সত্যি হওয়া প্রায় অসম্ভব। যেমন – সহজ কাজের বিনিময়ে দ্রুত টাকা উপার্জনের লোভ দেখানো হয়, এবং এর জন্য অগ্রিম কিছু টাকা দিতে বলা হয়।
এছাড়াও, টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্ক্যাম একটি সাধারণ ঘটনা। এক্ষেত্রে, আপনার কম্পিউটারে পপ-আপ মেসেজ বা সতর্কবার্তা দেখানো হয়, যা মাইক্রোসফট বা অ্যাপলের মতো কোম্পানির হতে পারে।
সেখানে আপনার কম্পিউটার হ্যাক হয়েছে এবং সাহায্যের জন্য একটি নম্বরে ফোন করতে বলা হয়। পুরস্কার জেতার লোভ দেখিয়েও প্রতারণা করা হয়, যেখানে ভুক্তভোগীকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য কিছু টাকা জমা দিতে বলা হয়।
আর্থিক প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি। কোনো অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন, মেসেজ বা ইমেইল পেলে, কোনো সাড়া দেওয়া উচিত নয়।
সন্দেহজনক কিছু মনে হলে, সরাসরি সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর বা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য যাচাই করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয় এবং কোনো প্রলোভনে পা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
মনে রাখবেন, যা সহজে পাওয়া যায়, তার পেছনে সবসময় কিছু না কিছু লুকানো থাকে।
যদি আপনি প্রতারিত হয়ে থাকেন, তাহলে দ্রুত আপনার ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করুন। সেই সঙ্গে, আপনার ঘটনার বিবরণ ফেডারেল ট্রেড কমিশন (FTC)-এর কাছে জানান।
এই ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে আপনার অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আপনার কথা অন্যদের সচেতন করতে সাহায্য করবে।
আর্থিক প্রতারণা থেকে বাঁচতে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। আপনার সামান্য সচেতনতাই পারে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন