আতঙ্কে ফিনল্যান্ড! স্কুল চলাকালীন মোবাইল ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা!

ফিনল্যান্ডে স্কুল চলাকালীন মোবাইল ফোনের ব্যবহার সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং পড়াশোনার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। দেশটির পার্লামেন্ট এই সংক্রান্ত একটি আইন অনুমোদন করেছে এবং আগামী ১লা আগস্ট থেকে এটি কার্যকর হবে।

নতুন এই নিয়মের অধীনে, ক্লাসের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শিক্ষক বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না, তবে স্বাস্থ্যগত প্রয়োজন অথবা পড়াশোনার জন্য এর ব্যতিক্রম থাকতে পারে।

ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর মতো, ফিনল্যান্ডও শিশুদের উপর মোবাইল ফোনের প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। মনোযোগের অভাব, আত্ম-সম্মান কমে যাওয়া, ইত্যাদি সমস্যাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ডেনমার্ক সম্প্রতি তাদের সকল স্কুলে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।

দেশটির ওয়েলবিং কমিশনের প্রধান রাসমাস মেয়ারের মতে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর আগ্রাসন থেকে স্কুলগুলোকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল। তিনি ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকেও একই পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়েছেন।

ডেনিশ কমিশন একটি সমীক্ষায় দেখেছে যে, ১৩ বছর হওয়ার আগেই দেশটির প্রায় ৯৪% কিশোর-কিশোরীর সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল রয়েছে। এছাড়াও, ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সীরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা টিকটক এবং ইউটিউবে ব্যয় করে।

ফ্রান্স ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করেছে। তারা ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য একটি “ডিজিটাল বিরতি” পরীক্ষা করছে।

নরওয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অংশগ্রহণের জন্য সর্বনিম্ন বয়সসীমা ১৫ বছর নির্ধারণ করেছে। নরওয়ে সরকারের মতে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ছোট শিশুদের মস্তিষ্কের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

যুক্তরাজ্যেও স্কুলগুলোতে মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশটির প্রায় ৯৯.৮% প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৯০% মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কিছু না কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে, যদিও সেখানে জাতীয় পর্যায়ে কোনো আইন নেই।

ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিভাগকে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারের বিধিনিষেধের প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ এই গবেষণা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এরপর, প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী, শিক্ষা বিভাগ আরও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

নতুন নিয়মানুসারে, শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পড়াশোনার কাজে অথবা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে। কোনো শিক্ষার্থী যদি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষক তা বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন।

এছাড়া, স্কুলগুলোকে ক্লাস, খাবার বিরতি এবং অন্যান্য সময়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও সংরক্ষণের জন্য নিয়ম তৈরি করতে হবে।

আইনটি পাশের সময় কিছু সংসদ সদস্য এর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুধু ক্লাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিরতি এবং খাবারের সময়েও নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

ফিনল্যান্ডের শিক্ষামন্ত্রী আন্ডার্স অ্যাডারক্রেইজ গত ডিসেম্বরে বলেছিলেন, স্কুলের কাজ শুধু জ্ঞান বিতরণ করাই নয়, বরং সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করাও।

তিনি আরও বলেন, “আমি আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা খেলার মাঠে আরও বেশি সময় কাটাব এবং মোবাইল ফোনের পরিবর্তে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাব।”

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *