ফায়ারিং স্কোয়াড: কেন মৃত্যুদণ্ডের নতুন আতঙ্ক?

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিতর্কিত এক নতুন পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে প্রাণঘাতী ইনজেকশনের বিকল্প হিসেবে ফায়ারিং স্কোয়াড বা বন্দুকধারীদের দল ব্যবহারের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ ক্যারোলিনা রাজ্যের একটি কারাগারে সম্প্রতি ফাঁসির বদলে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়া, আইডিহো অঙ্গরাজ্যে এই পদ্ধতিকে প্রধান মৃত্যুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করার জন্য আইন পাস হয়েছে।

ফায়ারিং স্কোয়াড আসলে কী? এই পদ্ধতিতে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড় করানো হয় এবং এরপর কয়েকজন বন্দুকধারী তাদের দিকে গুলি ছোড়ে। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কারণ হিসেবে উঠে আসছে বেশ কিছু বিষয়।

প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রধান পদ্ধতি হলো প্রাণঘাতী ইনজেকশন। কিন্তু এই ইনজেকশনের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নিয়ে প্রায়ই জটিলতা দেখা যায়। অনেক সময়, ওষুধের অভাব অথবা অন্য কোনো কারণে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে সমস্যা হয়।

এছাড়া, ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেক সময় নিষ্ঠুর এবং কষ্টদায়ক বলেও অভিযোগ ওঠে।

দ্বিতীয়ত, ফায়ারিং স্কোয়াডকে তুলনামূলকভাবে দ্রুত এবং কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও এই পদ্ধতিতে সরাসরি সহিংসতার বিষয়টি জড়িত, কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের একটি নির্ভরযোগ্য উপায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়রও একবার এই পদ্ধতির সম্ভাব্যতা নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ফায়ারিং স্কোয়াড সম্ভবত অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য এবং দ্রুত হতে পারে।

তবে, ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই পদ্ধতি নৃশংস এবং বর্বর।

অনেক মানবাধিকার সংস্থা এবং আইন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ফায়ারিং স্কোয়াড মৃত্যুদণ্ডের একটি আদিম রূপ, যা সমাজের নিষ্ঠুরতাকে প্রকাশ করে।

যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার দীর্ঘদিনের পুরনো। অতীতে ফাঁসি, গ্যাস চেম্বার এবং ইলেক্ট্রিক চেয়ারের মতো পদ্ধতিও ব্যবহৃত হয়েছে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতিগুলোতে পরিবর্তন এসেছে, মূলত একে আরও মানবিক করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাণঘাতী ইনজেকশন সেই পরিবর্তনেরই একটি অংশ ছিল।

তবে, এখন যখন সেই পদ্ধতি নিয়ে জটিলতা দেখা যাচ্ছে, তখন ফায়ারিং স্কোয়াডের মতো পুরোনো পদ্ধতিগুলো আবার আলোচনায় আসছে।

আইডিহোর একজন আইনপ্রণেতা, যিনি ফায়ারিং স্কোয়াডকে সমর্থন করেন, বলেছেন যে, এটি দ্রুত এবং অপেক্ষাকৃত কম কষ্টদায়ক।

তিনি মনে করেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর যন্ত্রণা কমানোর ক্ষেত্রে এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

অন্যদিকে, ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দৃশ্যমান সহিংসতা অনেককে উদ্বিগ্ন করে। অনেকে মনে করেন, এর ফলে মৃত্যুদণ্ডের প্রক্রিয়াটি আরও নিষ্ঠুর এবং ভীতিকর হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা উচিত কিনা, সেই বিতর্ক দীর্ঘদিনের। ফায়ারিং স্কোয়াডের পুনরুত্থান সেই বিতর্ককে আরও উস্কে দিচ্ছে।

এটি শুধু মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতি নিয়ে নয়, বরং সমাজের নৈতিকতা এবং বিচারব্যবস্থা নিয়েও নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি করেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *