ফ্ল্যানারি ও’কনর: জন্মশতবর্ষে এক বিতর্কিত সাহিত্যিকের পুনর্মূল্যায়ন।
মার্কিন লেখিকা ফ্ল্যানারি ও’কনরের জন্মশতবর্ষে, তাঁর সাহিত্যকর্ম আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁর জীবন, সৃষ্টিকর্ম এবং বিতর্কিত মতামত – সবকিছু নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
ক্যানসার কিংবা এইডস-এর মতো মারণরোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষের কথা আমরা জানি, কিন্তু ফ্ল্যানারি ও’কনর ছিলেন “লুপাস” নামক একটি জটিল অটোইমিউন রোগের শিকার। এই রোগের সঙ্গে লড়াই করতে করতেই তিনি লিখে গেছেন তাঁর বিখ্যাত সব গল্প।
ফ্ল্যানারি ও’কনরের জন্ম ১৯২৫ সালের ২৫শে মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সাভানা শহরে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এবং মা ছিলেন পুরনো একটি দক্ষিণী পরিবারের সদস্য।
অল্প বয়সেই তিনি লেখালেখির প্রতি আকৃষ্ট হন এবং পরবর্তীতে আইওয়া রাইটার্স ওয়ার্কশপ থেকে ফাইন আর্টস-এ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস “ওয়াইজ ব্লাড” প্রকাশিত হওয়ার পরেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন।
কিন্তু নিয়তি যেন তাঁর পথ আগলে দাঁড়িয়েছিল। ২৫ বছর বয়সে তিনি জানতে পারেন, তিনি লুপাস রোগে আক্রান্ত।
এই রোগ তাঁর শরীরকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিচ্ছিলো। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি ক্র্যাচ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
প্রতিদিন এক ঘণ্টা লেখার সুযোগ পেতেন, আর সেই সময়টুকুকে তিনি “ফাইল মিনিয়নের মতো” উপভোগ করতেন। অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি লেখা চালিয়ে যান, এবং তাঁর সাহিত্যকর্মের গভীরতা আরও বাড়ে।
ও’কনরের লেখায় প্রায়ই দেখা যায়, মানুষের ভেতরের অন্ধকার দিক, নৈতিক অবক্ষয় এবং ধর্মের প্রতিচ্ছবি। তাঁর গল্পগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়, চরিত্রগুলো হয় নিপীড়িত, না হয় খলনায়ক।
“এ গুড ম্যান ইজ হার্ড টু ফাইন্ড” তাঁর সবচেয়ে পরিচিত গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। গল্পটিতে এক পরিবারের সড়ক ভ্রমণের সময় ঘটা অপ্রত্যাশিত ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, যেখানে মানুষের নিষ্ঠুরতা ও নিয়তির এক ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠেছে।
তাঁর সাহিত্যকর্ম “সাউদার্ন গথিক” ঘরানার অন্তর্ভুক্ত।
এই ঘরানাটি উইলিয়াম ফকনারের মতো লেখকদের দ্বারা প্রভাবিত। ফ্ল্যানারি ও’কনর তাঁর গল্পে প্রায়ই দক্ষিণের সমাজের কুসংস্কার, বর্ণবাদ এবং ধর্মীয় ভণ্ডামি তুলে ধরেছেন।
তাঁর লেখার এই দিকটি অনেক সময় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সমালোচকরা তাঁর কিছু ব্যক্তিগত মতামত এবং বর্ণবাদের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে, তাঁর জীবন ও কাজ নিয়ে নির্মিত হয়েছে “ওয়াইল্ডক্যাট” (Wildcat) নামে একটি চলচ্চিত্র।
চলচ্চিত্রটি ফ্ল্যানারি ও’কনরের জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছে, বিশেষ করে তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস এবং লেখার প্রক্রিয়া।
তবে, ছবিতে তাঁর বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি বলে অনেকে সমালোচনা করেছেন।
ফ্ল্যানারি ও’কনর তাঁর জীবদ্দশায় খুব বেশি পরিচিতি পাননি।
তবে মৃত্যুর পর তাঁর সাহিত্যকর্মের গুরুত্ব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর গল্পগুলো আজও মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে।
তাঁর জন্মশতবর্ষে, তাঁর সাহিত্যকর্ম নতুন করে পাঠ করা, তাঁর জীবন ও কাজের জটিলতাগুলো নিয়ে আলোচনা করা জরুরি।
তাঁর লেখায় মানুষের মনস্তত্ত্ব, সমাজের অন্ধকার দিক এবং ধর্মের গভীরতা অনবদ্যভাবে ফুটে উঠেছে, যা আজও পাঠককে নাড়া দেয়।
তথ্য সূত্র: The Guardian