মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থার কারণে বিমান ভ্রমণে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের (বিমান ট্রাফিক নিয়ন্ত্রক) বেতন বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলস্বরূপ কর্মী সংকটে ভুগছে বিমান সংস্থাগুলি।
এর কারণে এরই মধ্যে শত শত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন এমন যে কারও জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর থেকে ভ্রমণের প্রস্তুতি এবং সম্ভাব্য জটিলতাগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA)। সরকারি অচলাবস্থার কারণে FAA-এর কর্মীদের মধ্যে অনেকে কাজে যোগ দিতে পারছেন না।
এর ফলে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থায় তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। FAA জরুরি ভিত্তিতে বিমান সংস্থাগুলোকে তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমাতে নির্দেশ দিয়েছে।
এর ফলস্বরূপ, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী যাত্রী নয়, আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদেরও সমস্যা হতে পারে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটের সংখ্যা বিবেচনা করলে বোঝা যায়, পরিস্থিতি কতটা গুরুতর।
জানা গেছে, শুধুমাত্র শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ১,৭০০-এর বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়েছে দেশটির ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোতে।
এর মধ্যে ওয়াশিংটন, ডিসি’র রেগান ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, শিকাগো ও’হারে, আটলান্টা হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থের মতো প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান এয়ারলাইন্সগুলো যেমন আমেরিকান এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স এবং সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। এই এয়ারলাইন্সগুলো তাদের যাত্রীদের টিকিটের তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মাশুল মওকুফ করার ঘোষণা দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, শনিবার আমেরিকান এয়ারলাইন্স ২২0 টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, তারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শত শত ফ্লাইট বাতিল করবে।
সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সও তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে ভ্রমণকারীদের জন্য কিছু জরুরি পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো:
- ফ্লাইটের বর্তমান অবস্থা জেনে নিন: যাত্রা করার আগে আপনার ফ্লাইটের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে অথবা ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটে ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
- বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করুন: ফ্লাইট বাতিল হলে বা বিলম্বিত হলে আপনার যাত্রা পথে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে জেনে রাখুন।
- পরিবর্তন ফি সম্পর্কে জেনে নিন: টিকিটের তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স কোনো ফি মওকুফ করছে কিনা, সে বিষয়ে জেনে নিন।
- ভ্রমণ বীমা করুন: অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে যদি আপনার ফ্লাইট বাতিল হয় বা অন্য কোনো সমস্যা হয়, তবে ভ্রমণ বীমা আপনাকে আর্থিক সুরক্ষা দিতে পারে।
- সরাসরি এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে টিকিট কিনুন: তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইটের পরিবর্তে সরাসরি এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে টিকিট কিনলে কোনো সমস্যা হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সহজ হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। যেকোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকতে ভ্রমণের আগে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা অপরিহার্য।
ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বের মতো ঘটনাগুলো যে কারো ভ্রমণ পরিকল্পনাকে এলোমেলো করে দিতে পারে। তাই, আগে থেকে সতর্ক থাকলে ভ্রমণকারীরা নিজেদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন