ফ্লিন্ট, মিশিগান: নেতৃত্ব দেওয়ার এক দশক পরও নিরাপদ নয় সেখানকার পানি।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরে এক দশকেরও বেশি সময় আগে পানির সংকট দেখা দেয়। শহরের পুরোনো পাইপলাইন পরিবর্তনের পর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এখন সেখানকার পানি নিরাপদ। তবে এখানকার বাসিন্দাদের মনে এখনো শঙ্কা রয়ে গেছে।
তারা বলছেন, পুরোনো দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাদের সহজে ভুলবার নয়।
২০১৪ সালে শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়। খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে ডেট্রয়েটের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে ফ্লিন্ট নদীর পানিতে স্থানান্তরিত করা হয়।
এরপর থেকেই শুরু হয় দুর্ভোগ। পানির সঙ্গে মিশে আসে সীসা, যা বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়। অনেক শিশু স্বাস্থ্যগত জটিলতায় পড়ে।
ফ্লিন্টের বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় ও রাজ্য সরকার সংকট সমাধানে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি।
ফ্লিন্টের বাসিন্দা মেলিসা মেস বলেন, তিনি হয়তো আর কখনো এখানকার পানির ওপর আস্থা রাখতে পারবেন না। তিনি জানান, পানির কারণে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন।
শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, এমনকি শিশুদের কথা বলতেও সমস্যা হয়েছে। এখনো তার এলাকার পানির রং হলুদ থাকে এবং দুর্গন্ধ হয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত ফিল্টার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) ফ্লিন্টের পানিকে নিরাপদ ঘোষণা করলেও স্থানীয়দের মধ্যে এখনো সন্দেহ রয়ে গেছে। তারা কর্তৃপক্ষের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।
তাদের অভিযোগ, সমস্যার সমাধানে দীর্ঘসূত্রতা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
ফ্লিন্টের মেয়র শেলডন নীলের মতে, পাইপলাইন পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শহরের সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের পথে সাহায্য করবে।
তিনি বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে বলেন, শহরের পানি এখন মিশিগান রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানের। এমনকি দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা। স্থানীয় সরকার জনগণের আস্থা ফেরাতে কাজ করছে।
তবে ফ্লিন্টের অনেক বাসিন্দাই এখনো এখানকার পানি ব্যবহার করতে ভয় পান। তারা মনে করেন, এই সমস্যার কারণে তাদের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অনেক পরিবার শহর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। ফ্লিন্টের মানুষেরা চান, তাদের স্বাস্থ্য ও আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
পরিবেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা কাউন্সিলের (Natural Resources Defense Council) ম্যাথিউ তেজাদা জানান, সীসার পাইপলাইন অপসারণ ফ্লিন্টের বাসিন্দাদের জন্য একটি জয়।
তবে তিনি মনে করেন, দেশের দরিদ্র ও কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এ ধরনের সমস্যা এখনো একটি উদ্বেগের বিষয়।
ফ্লিন্টের ব্যাপটিস্ট চার্চের যাজক রেভারেন্ড অ্যালেন সি. ওভারটন বলেন, বাসিন্দারা স্থানীয় সরকারের প্রতি গভীর অনাস্থা পোষণ করেন।
কারণ, তারা স্বাস্থ্যগত সমস্যা, মানসিক আঘাত ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তিনি মনে করেন, এই সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করা উচিত ছিল।
ফ্লিন্টের এই ঘটনা শুধু একটি শহরের সমস্যা নয়, বরং এটি পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট এবং তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন