আতঙ্ক! ঘূর্ণিঝড়ের আগে কী ভয় নিরাপত্তা পরিচালকের?

ফ্লোরিডা কিসের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি: বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা?

বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের কাছে ঘূর্ণিঝড় একটি পরিচিত দুর্যোগ। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের মোকাবিলায় প্রস্তুতি সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কিস্ দ্বীপপুঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি নিয়ে সেখানকার জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান শ্যানন উইনারের উদ্বেগের কথা জানা গেছে। আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের আগে সেখানকার প্রস্তুতি এবং ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

ফ্লোরিডা কিস্ দ্বীপপুঞ্জ : ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা

ফ্লোরিডা কিস্ দ্বীপপুঞ্জ, যা আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত, ঘূর্ণিঝড়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি এলাকা। একদিকে আটলান্টিক মহাসাগর এবং অন্যদিকে মেক্সিকো উপসাগর—এই দুই বিশাল জলরাশির মাঝে এর অবস্থান এটিকে আরও বেশি সংবেদনশীল করে তোলে।

এখানকার বাসিন্দারা সাধারণত তাদের জীবনযাত্রার ধরন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এই অঞ্চলে থাকতে পছন্দ করেন, কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি তাদের সব সময়ই তাড়া করে ফেরে।

ঝুঁকি মোকাবেলার প্রস্তুতি

মনরো কাউন্টির জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক শ্যানন উইনার জানান, ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

তাদের নতুন জরুরি অপারেশন সেন্টার এবং সমুদ্রের লবণাক্ত জলকে বিশুদ্ধ করার নতুন প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও, ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA)-এর সহায়তায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং ঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে তারা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

হারিকেন ইরমার অভিজ্ঞতা

২০১৭ সালে আঘাত হানা হারিকেন ইরমা কিস্ দ্বীপপুঞ্জে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছিল।Category 4 মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি ছিল ঘন্টায় প্রায় ২১২ কিলোমিটার।

এতে ১,১৮০টির বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায় এবং আরও ৩,০০০ বাড়ির গুরুতর ক্ষতি হয়। শ্যানন উইনার বলেন, “হারিকেন ইরমার মতো বড় একটি ঝড়ের অভিজ্ঞতা এখানকার মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। আমরা দেখেছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি কতটা জরুরি।”

ঝুঁকি সত্ত্বেও বসবাস

কিস্ দ্বীপপুঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখানকার মানুষকে আকৃষ্ট করে। এখানকার মানুষজন সমুদ্র এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে।

তাই ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তারা এই অঞ্চলে বসবাস করতে আগ্রহী। শ্যানন উইনার বলেন, “এখানে বসবাসকারীরা সবসময় প্রস্তুত থাকে এবং ঝড়ের সময় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করে।”

উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারীদের জন্য শিক্ষা

ফ্লোরিডা কিস্ দ্বীপপুঞ্জের এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়ে আসে। বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতেও ঘূর্ণিঝড় একটি নিয়মিত দুর্যোগ।

তাই, দুর্যোগের পূর্বাভাস, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, জরুরি ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের প্রস্তুতি, এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।

শ্যানন উইনারের মতে, “একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা ভেবে ঘুম হারাম হয়ে যায়।” তাই, দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে এবং জীবনহানি এড়াতে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *