খেলাধুলার ভুবনে নতুন দিগন্ত: বিনোদনের মোড়কে ফুটবলের ভবিষ্যৎ?
ফুটবল খেলার ধরনে আসছে পরিবর্তন। মাঠের ১১ জন খেলোয়াড়ের চিরাচরিত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে জনপ্রিয়তা বাড়ছে নতুন ধরনের টুর্নামেন্টের।
যেখানে খেলা দ্রুত, উত্তেজনা বেশি, এবং তারকাখ্যাতির ঝলকানি বিদ্যমান। সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যে “বোলার লীগ” নামের একটি টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে, যা এই নতুন ধারার একটি উদাহরণ।
আসলে, এই ধরনের খেলার মূল আকর্ষণ হলো দর্শকদের বিনোদন। চিরাচরিত ফুটবল খেলার থেকে এখানে খেলার গতি অনেক বেশি, নিয়মকানুনও ভিন্ন।
উদাহরণস্বরূপ, বোলার লীগে প্রতিটি দলে খেলোয়াড় সংখ্যা ৬ জন এবং ম্যাচগুলি ১৫ মিনিটের দুটি অর্ধে বিভক্ত। খেলার মাঝে মাঝে এমন কিছু নিয়ম যোগ করা হয়, যা খেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
যেমন, গোলরক্ষক হাত ব্যবহার করতে পারবে না। এই ধরনের পরিবর্তনগুলো খেলার আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে।
“বোলার লীগ”-এর প্রধান নির্বাহী ফেলিক্স স্টার্ক মনে করেন, চিরাচরিত ফুটবলে দর্শকদের আগ্রহ কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো খেলার ধীর গতি এবং একঘেয়েমি।
খেলাগুলোতে ভিএআরের (VAR) কারণে অনেক সময় নষ্ট হয়, যা দর্শকদের বিরক্তির কারণ হয়। তাছাড়া, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত দক্ষতার পরিবর্তে দলের কৌশলগত দিকটির ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়।
স্টার্কের মতে, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম তাদের পছন্দের খেলোয়াড়দের অনুসরণ করতে বেশি আগ্রহী, দলের প্রতি তাদের তেমন আকর্ষণ নেই।
এই নতুন ধারার খেলাগুলোতে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি সেলিব্রিটিদের অংশগ্রহণও দেখা যায়। “বোলার লীগ”-এ যেমন গ্যারি লিনেকার, জন টেরি, লুইস ফিগো, এবং কেইএসআই-এর মতো তারকারা যুক্ত আছেন।
তারা হয়তো সরাসরি খেলেন না, কিন্তু এই খেলার সঙ্গে তাদের যুক্ত থাকা দর্শকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তোলে। মায়া জামা নামের একজন উপস্থাপিকা এই লীগের একটি দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে, এই ধরনের খেলার উত্থান কেবল বিনোদনের জন্য নয়। এর পেছনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কাজ করে।
তা হলো, খেলোয়াড়দের ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করা। এখানে, খেলার পারফরম্যান্সের চেয়ে একজন খেলোয়াড়ের ব্র্যান্ড ভ্যালু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এই ধরনের টুর্নামেন্টগুলো খেলোয়াড়দের নিজেদের পরিচিতি তৈরি এবং তাদের ব্র্যান্ডকে জনপ্রিয় করার সুযোগ করে দেয়। বোলার লীগের খেলোয়াড়রা প্রতিটি খেলার জন্য প্রায় ৪৪০ পাউন্ড পান।
এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বলা যায়, ফুটবল এখন আর শুধু মাঠের খেলা নয়, এটি একটি বিশাল ব্যবসার ক্ষেত্র।
টিকিট ও সম্প্রচার স্বত্বের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় সাধারণ দর্শকদের পক্ষে খেলা উপভোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই, নতুন এই ধরনের খেলার উদ্ভব হয়েছে, যেখানে খেলাগুলো ছোট, দ্রুতগতির এবং সহজে উপভোগ করা যায়।
স্পেনে “কিংগস লীগ” এবং “ওয়ার্ল্ড সেভেনস ফুটবল (W7F)”-এর মতো টুর্নামেন্টগুলোও এই নতুন ধারার অংশ।
“ওয়ার্ল্ড সেভেনস ফুটবল”-এর পুরস্কার মূল্য প্রায় ৩.৯ মিলিয়ন পাউন্ড। এই ধরনের খেলার জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যা চিরাচরিত ফুটবল কাঠামোর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশেও ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয়।
যেখানে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স এবং বিনোদন দর্শকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। ভবিষ্যতে, ফুটবলও কি একই পথে হাঁটবে?
সম্ভবত, খেলাধুলার এই নতুন ধারার সঙ্গে পরিচিত হতে চলেছে আমাদের দেশও।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান