একটু হাসলো, আবার কেঁদে ফেললো চেলসি রিভস। জীবনের কঠিন পথ পেরিয়ে তিনি যখন বুঝতে শুরু করেছেন, ভালোবাসার আসল মানে কী, ঠিক তখনই তার মনে হলো, এই গল্পটা সবার জানা দরকার।
যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা চেলসির শৈশবটা মোটেও সুখের ছিল না। অল্প বয়সেই তিনি আশ্রয়হীন শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের একটি সিস্টেমে প্রবেশ করেন। যেখানে দিনের পর দিন তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে তাকে।
কিন্তু সবকিছু বদলে যায় যখন তিনি তার ছোট ভাই হুগোর কথা জানতে পারেন। হুগো তখন খুবই ছোট, মাত্র পাঁচ মাস বয়স।
আদালতের নির্দেশে তাকেও রাখা হয় সেই আশ্রয়কেন্দ্রে। চেলসি কিছুতেই চাননি তার ভাইয়ের জীবনেও এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আসুক।
তাই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, হুগোকে এই খারাপ জগৎ থেকে দূরে রাখতে হবে।
নিজের অধিকার ফিরে পেতে চেলসি আইনের আশ্রয় নেন। ২০১৬ সালে, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর, তিনি আবার সেই আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে যান।
এরপর থেকেই শুরু হয় তার কঠিন লড়াই। সামাজিক পরিষেবা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিনি আইনি লড়াই শুরু করেন।
চেলসি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, শিশুদের দেখাশোনার নামে কিভাবে সেখানে শিশুদের সঙ্গে ভয়ংকর অন্যায় হয়।
আদালতে নিজের কথা প্রমাণ করা সহজ ছিল না। সমাজের চোখে তিনি ছিলেন মিথ্যাবাদী, একজন ভুক্তভোগীর আর্তনাদ যেন সেখানে শোনা যাচ্ছিল না।
চেলসি বারবার হতাশ হয়েছেন, কিন্তু হার মানেননি। অবশেষে, ২০১৭ সালে, তার আশ্রয়দাতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ মেলে এবং তিনি দীর্ঘ কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
চেলসি যেন কিছুটা হলেও মুক্তি খুঁজে পান।
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে, সামাজিক পরিষেবা কর্তৃপক্ষ অবশেষে তাদের ভুল স্বীকার করে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। চেলসি যেন এর মাধ্যমে তার প্রাপ্য সম্মান ফিরে পান।
তিনি জানান, “আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি, কারণ যে লোকটি আমাকে নির্যাতন করেছে, সে এখন জেলে। একইসঙ্গে, সামাজিক পরিষেবাও আমাকে আঘাত করেছে, কারণ তাদেরই তো শিশুদের রক্ষা করার কথা।”
এরপরই চেলসি হুগোকে নিজের কাছে নিয়ে আসার জন্য নতুন করে চেষ্টা শুরু করেন। আদালতে তিনি হুগোর দেখাশোনার দায়িত্ব চেয়ে আবেদন করেন।
চেলসির কথায়, “হুগোকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের করে আনাটা ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ।” তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
এমনকী, হুগোর জন্য আলাদা ঘর বানানোর শর্ত দেওয়া হয়েছিল তাকে। কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যেও চাপ দেওয়া হয়।
চেলসি জানান, “তারা ভেবেছিল, যেহেতু আমি ছোটবেলায় নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তাই হয়তো হুগোর সঙ্গেও খারাপ কিছু করব।”
কিন্তু চেলসি হাল ছাড়েননি। তিনি আদালতের কাছে ১৮৬ পৃষ্ঠার একটি হলফনামা জমা দেন, যেখানে তিনি তাদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন।
অবশেষে, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে, তিনি আদালতের অনুমতি পান এবং হুগোকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন।
আজকের দিনে চেলসি এবং হুগো এক счастли পরিবার। হুগো এখন ২ বছর বয়সী এবং দিদির কাছেই মানুষ হচ্ছে।
চেলসি চান, হুগো যেন তার মতো কষ্ট না পায়। তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত করতে চেয়েছি, হুগো যেন আমার মতো জীবন না কাটায়। সে যেন ভালোবাসা আর আনন্দে বাঁচে।”
চেলসি এখন তার জীবনের গল্প সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান। তিনি চান, মানুষ যেন শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রের খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়।
তিনি চান, এমন একটি সমাজ গড়তে যেখানে কোনো শিশুকে যেন তার মতো কষ্টের শিকার হতে না হয়।
তথ্য সূত্র: পিপল