ফুটবলে লাল কার্ড পাওয়া প্রথম খেলোয়াড় কে ছিলেন?

ফুটবলে লাল কার্ড বাতিলের বিচিত্র ইতিহাস

ফুটবল খেলায় রেফারিদের সিদ্ধান্ত অনেক সময়ই বিতর্কের জন্ম দেয়। খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে বহিষ্কার বা লাল কার্ড দেখানোর ঘটনাও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে, বিশেষ করে ভিডিও প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে, এখন অনেক সময় লাল কার্ড বাতিল করারও সুযোগ তৈরি হয়েছে।

খেলার ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে, যেখানে খেলোয়াড়দের লাল কার্ড পাওয়া সত্ত্বেও পরবর্তীতে তা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

১৯৬৯ সালের কথা। চতুর্থ বিভাগের একটি ম্যাচে স্বানসি’র বিরুদ্ধে খেলছিল নর্দাম্পটন টাউন। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে নর্দাম্পটনের ফরোয়ার্ড ফ্রাঙ্ক লার্জ রেফারি একটি ফ্রি-কিক দেওয়ায় অসন্তুষ্ট হয়ে বলটি দর্শকের দিকে মারেন।

এতে এক ১২ বছর বয়সী দর্শকের মুখে লাগে। লার্জ যখন ক্ষমা চাইতে যান, তখন মাঠের ভেতরে ছুটে এসে বিলি ক্যারল নামে সাবেক এক স্বানসি খেলোয়াড় তাকে ঘুষি মারেন।

লার্জ এর পাল্টা জবাব দিলে রেফারি তাকে লাল কার্ড দেখান। পরে জানা যায়, বিলি ক্যারল এর ১২ বছর বয়সী ছেলে মারা গিয়েছিল।

লার্জের সমর্থনে তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি লেখেন। ঘটনার এক মাস পর লার্জকে দোষমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

এরপর অনেক বছর কেটে গেছে। খেলার নিয়ম-কানুন এবং প্রযুক্তির উন্নতি ঘটেছে। ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে লিভারপুলের ল্যারি লয়েডকে ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড়ের সাথে মারামারির কারণে লাল কার্ড দেখানো হয়েছিল।

যদিও পরে আপিলের মাধ্যমে তার তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে রেফারি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হন।

আর্সেনাল এবং ওয়েস্ট হ্যামের মধ্যকার একটি ম্যাচে মার্ক ওয়ার্ডকে লাল কার্ড দেখানো হয়েছিল, তবে ভিডিও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সেই সিদ্ধান্ত বহাল ছিল।

কারণ তখনকার নিয়মানুযায়ী, শুধুমাত্র খেলোয়াড় চিহ্নিতকরণে ভুল হলে আপিল করার সুযোগ ছিল।

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে রুডি ভোলারের ঘটনাও বেশ আলোচিত। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে ফ্রাঙ্ক রিকার্ডের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে লাল কার্ড পান ভোলার।

ফিফা জানায়, রেফারির সিদ্ধান্ত খেলার নিয়মের ভুল ছিল না, তাই আপিল খারিজ করা হয়।

নিয়ম-কানুনের পরিবর্তনের ফলে, ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি ম্যাচে রেফারির লাল কার্ডের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার প্রথম নজির সৃষ্টি হয়।

এরপর ১৯৯২-৯৩ সালের প্রিমিয়ার লিগের মৌসুমে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলরক্ষক পিটার স্মাইকেলের সাথে ধাক্কাধাক্কির কারণে কোভেন্ট্রির খেলোয়াড় মিক কুইনকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখানো হয়।

পরবর্তীতে ভিডিও দেখে রেফারি তার ভুল স্বীকার করেন এবং কুইনের লাল কার্ড বাতিল করা হয়।

ফুটবলে লাল কার্ড এবং তার বাতিলের এই ঘটনাগুলো খেলার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নিয়মের পরিবর্তনের ফলে খেলোয়াড়েরা এখন তাদের অধিকার রক্ষার আরও বেশি সুযোগ পাচ্ছেন।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *