ফ্রান্সে জীবনাবসানের অধিকার বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে ভোটাভুটি হতে যাচ্ছে। দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এই বিলটি মঙ্গলবার উত্থাপন করা হয়, যেখানে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য জীবনাবসানের সুযোগ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। ইউরোপজুড়ে যখন জীবনের শেষ সময়ে সহায়তা করার দাবি জোরালো হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে এই বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, যাদের আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা নেই, এমন গুরুতর অসুস্থ এবং যন্ত্রণা-কষ্টে কাতর প্রাপ্তবয়স্করা কিছু শর্তসাপেক্ষে জীবনাবসানের জন্য ওষুধ সেবন করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ায়, রোগীকে নিজে ওষুধ সেবন করতে হবে।
তবে, শারীরিক কারণে যারা নিজে ওষুধ নিতে অক্ষম, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসক অথবা নার্স সহায়তা করতে পারবেন।
বিলে এই সুবিধা পাওয়ার জন্য কিছু কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন, আবেদনকারীকে অবশ্যই ফরাসি নাগরিক অথবা ফ্রান্সে বসবাসকারী হতে হবে এবং তার বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল নিশ্চিত করবেন যে, রোগীর শারীরিক অবস্থা গুরুতর এবং আরোগ্য অযোগ্য।
এছাড়াও, রোগী তীব্র এবং অসহনীয় যন্ত্রণায় ভুগছেন এবং স্বেচ্ছায় জীবনাবসানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা, সেটাও বিবেচনা করা হবে। তবে, গুরুতর মানসিক অসুস্থতা এবং আলঝেইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে রোগী জীবনাবসানের জন্য ওষুধের আবেদন করতে পারবেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ থাকবে। এরপর, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, রোগী তার বাড়িতে, নার্সিং হোমে অথবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ সেবন করতে পারবেন।
একই সঙ্গে, মঙ্গলবার অসুস্থ রোগীদের যন্ত্রণা লাঘব এবং তাদের সম্মান রক্ষার জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমমূলক চিকিৎসা বিষয়ক একটি বিলের ওপরও ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
২০২৩ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফ্রান্সের অধিকাংশ নাগরিক জীবনাবসানের অধিকারের পক্ষে মত দিয়েছেন। গত ২০ বছরে জনমত জরিপেও এই সমর্থনের হার বেড়েছে। যদিও, বিলটি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে দেশটির ধর্মীয় নেতারা এর বিরোধিতা করছেন।
তাঁদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ সমাজের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হতে পারে। ক্যাথলিক, অর্থোডক্স, প্রোটেস্ট্যান্ট, ইহুদি, মুসলিম এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ফ্রান্সের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সংগঠন (CRCF) এক যৌথ বিবৃতিতে বিলটির সমালোচনা করে বলেছেন, এটি বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ফ্রান্সের এই আলোচনার মাঝেই, যুক্তরাজ্যেও একই ধরনের একটি বিল নিয়ে আলোচনা চলছে। যেখানে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন শেষ করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যেও চিকিৎসকের সহায়তায় আত্মহত্যা করার অনুমতি রয়েছে।
নেদারল্যান্ডস, স্পেন, পর্তুগাল, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কলম্বিয়া, বেলজিয়াম এবং লুক্সেমবার্গেও কিছু শর্তসাপেক্ষে ইচ্ছামৃত্যু আইনসম্মত করা হয়েছে।
জীবনাবসানের অধিকার বিষয়ক এই বিতর্কটি একদিকে যেমন মানবিকতার প্রশ্ন, তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং নৈতিকতার সঙ্গেও জড়িত। এই বিলটি পাশ হলে, তা ফ্রান্সে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং অন্যান্য দেশের জন্যও আলোচনার একটি ক্ষেত্র তৈরি করবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস