ফ্রান্সের রাজনীতিতে বর্তমানে চরম ডানপন্থী দল এবং বিরোধী শিবিরের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। মারিন লে পেনের নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্তের জেরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
দলটির পক্ষ থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে, যেখানে এটিকে গণতন্ত্রের উপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বামপন্থী ও মধ্যপন্থী দলগুলো এর প্রতিবাদে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।
সম্প্রতি, মারিন লে পেনকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে দুই বছর স্থগিত করা হয়েছে এবং দুই বছর ইলেক্ট্রনিক ট্যাগ পরে থাকতে হবে।
এছাড়াও, তাকে ১ লক্ষ ইউরো (বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার বেশি) জরিমানা করা হয়েছে এবং পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে, ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত সাজা স্থগিত করা হয়েছে।
লে পেনের দল, ন্যাশনাল র্যালি (RN), এই রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে বর্ণনা করে এর বিরুদ্ধে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার’ আহ্বান জানিয়েছে। দলটির সমর্থকেরা আগামী দিনে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তারা মনে করছে, এই রায় তাদের দল এবং গণতন্ত্রের প্রতি একটি আঘাত।
অন্যদিকে, বামপন্থী ও মধ্যপন্থী দলগুলো আদালতের এই রায়ের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। তারা মনে করে, দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন স্থানে তারা প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করছে। এই দলগুলো বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছে, কারণ তারা হত্যার হুমকি শিকার হচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্রান্সের রাজনীতিতে এই বিভাজন গভীর প্রভাব ফেলবে। একদিকে যেমন লে পেনের দল তাদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে, তেমনই জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ফরাসি নাগরিক এই রায়কে সমর্থন করছেন।
একটি জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ মানুষ লে পেনের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টিকে সঠিক মনে করেন, যেখানে ৪৩ শতাংশ মনে করেন, তার শাস্তি হওয়াটা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের জনসমর্থন যাচাই করতে চাইছে। তবে, বিক্ষোভগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা কত হয়, সেদিকেই এখন সবার নজর।
এছাড়া, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রুর মধ্যপন্থী দল মোডেমের আটজন সদস্যকে একই ধরনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মারিন লে পেনের নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। লে পেনের দল যদি এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে পারে, তবে তা নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান