ফ্রান্স ভ্রমণের ১০টি লোভনীয় খাবার: স্বাদ আর ঐতিহ্যের মিশেল!

ফরাসি রন্ধনশৈলীর ১০টি ক্লাসিক পদ: খাদ্যরসিকদের জন্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।

ফ্রান্স, খাদ্যরসিকদের স্বর্গরাজ্য। এখানকার প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব বিশেষত্ব রয়েছে, যা এই দেশকে দিয়েছে এক অসাধারণ খাদ্য-সংস্কৃতি।

প্যারিসের প্যাস্ট্রি থেকে শুরু করে আল্পসের টার্টিফলেট—আসুন, ফ্রান্সেরiconic কিছু খাবারের সঙ্গে পরিচিত হই, যা খাদ্যরসিকদের মন জয় করে।

প্যারিসের প্যাস্ট্রি: মিষ্টিমুখের জন্য প্যারিস।

প্যারিস মানেই যেন রুফটপ ক্যাফে আর মুখরোচক প্যাস্ট্রি-র জগৎ। এখানে, আপনি পাবেন অসাধারণ সব প্যাস্ট্রি, যার প্রত্যেকটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শহরের ইতিহাস।

“অপেরা কেক”-এর কথাই ধরুন। বাদাম মিশ্রিত স্পঞ্জ, গানাস এবং বাটারক্রিমের স্তর দিয়ে তৈরি এই কেক-এর অনুপ্রেরণা এসেছে প্যারিসের অপেরা হাউসের কারুকার্যখচিত বারান্দা থেকে।

আবার, “প্যারিস-ব্রেস্ট” নামক চক্রাকারে তৈরি পেস্ট্রিটি প্রথম ১৯১০ সালে তৈরি করা হয়েছিল একটি সাইকেল রেসের স্মৃতিস্বরূপ।

এছাড়াও, “রাম বাবা” নামক একটি ক্লাসিক পদও এখানে খুবই জনপ্রিয়।

নিসের সালাদ নিসোয়া: ভূমধ্যসাগরের স্বাদ।

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত নিস শহরটি তার “সালাদ নিসোয়া”-এর জন্য বিখ্যাত। এই সালাদে আলু বা বিনসের বদলে থাকে নানান সবজি, ডিম, টুনা অথবা অ্যাংকোভি মাছ।

নিসের স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এই সালাদের আসল স্বাদ পাওয়া যায়।

“আচ্চিয়ার্ডো” (Restaurant Acchiardo) -এর মত পরিবার-পরিচালিত রেস্তোরাঁগুলোতে ঐতিহ্যপূর্ণ উপায়ে খাবার পরিবেশন করা হয়, যা খাদ্যপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

বোর্দোর কাছাকাছি: ঝিনুকের রাজ্য।

ফ্রান্সের আটলান্টিক উপকূলের কাছাকাছি “বাসাঁ দ্য আর্কাশোঁ”-এ গেলে আপনি তাজা ঝিনুকের স্বাদ নিতে পারবেন।

এখানকার “শে গুইলাম”-এর মতো জায়গাগুলোতে সরাসরি উৎপাদকের কাছ থেকে ঝিনুক কিনে খাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

ঝিনুকের সঙ্গে ঠাণ্ডা সাদা ওয়াইন-এর যুগলবন্দী এক কথায় অসাধারণ।

স্ট্রাসবার্গের চাউক্রুট গার্নি: জার্মানির কাছাকাছি এক পদ।

ফ্রান্সের আলসাস প্রদেশের রাজধানী স্ট্রাসবার্গ-এর “চাউক্রুট গার্নি” একটি জনপ্রিয় খাবার।

এটি মূলত এক ধরনের মাংসের পদ, যেখানে বিভিন্ন ধরনের শুকরের মাংস এবং সসেজ ব্যবহার করা হয়।

ঐতিহ্যবাহী ওয়াইন বার-এ (winstubs) এই খাবারটি পরিবেশন করা হয়।

“শে ইভোন”-এর মতো রেস্তোরাঁগুলোতে এই পদের আসল স্বাদ পাওয়া যায়।

ডরদোন-এর কনফি দে কানার্ড: হাঁসের মাংসের জাদু।

ডরদোন অঞ্চলে হাঁসের মাংস দিয়ে তৈরি “কনফি দে কানার্ড” একটি জনপ্রিয় পদ।

হাঁসের মাংস, নুন দিয়ে সংরক্ষণ করে, হাঁসের চর্বিতে রান্না করা হয়।

এই পদটি এখানকার স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে পাওয়া যায়, যা খাদ্যরসিকদের জন্য একটি লোভনীয় আকর্ষণ।

নান্তের গাতো নানতেই: অতীতের প্রতিচ্ছবি।

নান্ত শহরটি একসময় দাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল।

এই শহরের ঐতিহ্যবাহী “গাতো নানতেই” নামক কেক-টি ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের চিনি, ভ্যানিলা এবং রাম দিয়ে তৈরি করা হয়।

এই কেক-টি শহরের সংস্কৃতি আর ইতিহাসের একটি অংশ।

দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের ক্যাসুলেট: এক যুদ্ধের গল্প।

দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের তিনটি শহরে “ক্যাসুলেট” নামক একটি পদ খুব জনপ্রিয়।

এটি মূলত মাংস এবং শিমের একটি স্ট্যু।

অনেকের মতে, একশ বছরের যুদ্ধের সময় এই খাবারটি তৈরি হয়েছিল।

ক্যাস্টেলনাউডারিতে এই পদটি বিশেষভাবে প্রচলিত।

বাস্ক কান্ট্রির অ্যাক্সোয়া: মরিচের স্বাদ।

ফ্রান্সের বাস্ক কান্ট্রিতে গেলে “অ্যাক্সোয়া” নামক একটি পদ চেখে দেখতে পারেন।

এটি ভেড়ার মাংস, পেঁয়াজ এবং ক্যাপসিকামের একটি স্ট্যু, যা “পিমেন্ট ডি’এস্পেলেট” নামক স্থানীয় মরিচ দিয়ে রান্না করা হয়।

আল্পসের তার্তিফলেট: আল্পসের স্বাদ।

আল্পস অঞ্চলে “তার্তিফলেট” নামক একটি খাবার বেশ জনপ্রিয়।

এটি আলু, পেঁয়াজ, পনির এবং বেকন দিয়ে তৈরি একটি পদ।

যারা স্কিইং বা হাইকিং করতে যান, তাদের জন্য এই খাবারটি আদর্শ।

দিজঁ-এর পোলে গ্যাস্তো জ্যেরার: অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার।

দিজঁ শহরে “পোলে গ্যাস্তো জ্যেরার” নামক একটি পদ খুব বিখ্যাত।

মুরগির মাংস, সরিষা এবং ক্রিম দিয়ে তৈরি এই পদটি এক রান্নার ভুলের ফল।

ফরাসি রন্ধনশৈলী শুধু খাবারের স্বাদ নয়, বরং সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দিক।

আপনিও কি এই স্বাদ নিতে চান?

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *