ফ্রান্সের রাজনীতিতে আবারও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, যা দেশটির প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্যকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্সে রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন করে দেখা দিয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রুর সরকারের ভবিষ্যৎ এখন সংসদীয় ভোটের ওপর নির্ভরশীল। আগামী সোমবার (তারিখ উল্লেখ করতে হবে) পার্লামেন্টে তাঁর সরকারের প্রতি আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এই ভোটাভুটিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পরাজয় হতে পারে, যা ফ্রান্সের অর্থনীতিতে আরও একটি ধাক্কা দিতে পারে।
প্রায় নয় মাস আগে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ৭৪ বছর বয়সী বায়রুকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। বর্তমানে তিনি একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
বায়রুর মূল লক্ষ্য হল, সরকারি ব্যয়ের ওপর রাশ টানতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এবং এর মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান ঋণ ও ঘাটতি কমানো। এই উদ্দেশ্যে তিনি কিছু ব্যয় সংকোচনের প্রস্তাব করেছেন, যা সংসদে পেশ করা হবে।
কিন্তু বিরোধী দলগুলো এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বায়রুর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে। তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দেশের জন্য উপযুক্ত নয়।
ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি (ফরাসি পার্লামেন্ট)-র মোট সদস্য সংখ্যা ৫৭৭। গ্রীষ্মকালীন অবকাশের পর সোমবার দুপুর তিনটা থেকে এই বিশেষ অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা।
সাধারণত, আস্থা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী একটি ভাষণ দেন, যেখানে তিনি তাঁর সরকারের নীতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এরপর আইনপ্রণেতারা তাঁদের মতামত ব্যক্ত করবেন এবং সম্ভবত বিকেলের দিকে অথবা সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
যদি বায়রুর সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়, তাহলে ফরাসি সংবিধান অনুযায়ী তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এমনটা হলে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনকে নতুন সরকার গঠনের জন্য পুনরায় চেষ্টা করতে হবে, যা হবে বেশ কঠিন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের জুন মাসের (২০২৪) একটি সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা মূলত তাঁর রাজনৈতিক জোটের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ছিল।
কিন্তু এই পদক্ষেপের ফল হয় উল্টো। নির্বাচনে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, যার ফলে সংসদে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
এই রাজনৈতিক অস্থিরতা ম্যাক্রনের দ্বিতীয় মেয়াদে অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ক্ষেত্রে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তিনি এর আগে তিনজন প্রধানমন্ত্রীকে পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।
এর আগে গ্যাব্রিয়েল আত্তাল ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি প্রায় আট মাস দায়িত্ব পালন করেন। এরপর মাইকেল বার্নিয়ার অল্প সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
তবে অনাস্থা ভোটে তাঁর পতন হয়। বর্তমানে বায়রুর সামনেও একই চ্যালেঞ্জ, কারণ কোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, বায়রুর প্রস্তাবিত ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাঁদের মধ্যে বাম ও চরম ডানপন্থী দলের নেতারাও রয়েছেন।
তাঁদের মিলিত আসন সংখ্যা ৩০০-এর বেশি। অন্যদিকে, বায়রুর সমর্থক এবং মিত্রদের আসন সংখ্যা মাত্র ২১০।
যদি বায়রুর সরকার টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়, তবে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনকে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী খুঁজে বের করতে হবে যিনি এই কঠিন পরিস্থিতিতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। বর্তমানে ফ্রান্সের প্রধান সমস্যা হল বাজেট ঘাটতি এবং বিশাল ঋণ।
গত বছর ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি ছিল জিডিপি-র ৫.৮ শতাংশ, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। একই সময়ে, ফ্রান্সের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩.৩৪৬ ট্রিলিয়ন ইউরো, যা জিডিপির প্রায় ১১4 শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বায়রুর প্রস্তাবিত ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনায় সরকারি ছুটির দিন কমানোরও প্রস্তাব রয়েছে, যা বিরোধীদের সমালোচনার মুখে ফেলেছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস