ফ্রান্সের রাজনীতিতে চরম অস্থিরতা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগে গভীর সংকট। প্যারিস, [তারিখ] – ফ্রান্সের রাজনীতিতে আবারও গভীর সংকট তৈরি হয়েছে।
নতুন সরকার গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু। গত এক মাসেরও কম সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এই ঘটনায় দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ লেকর্নু’র পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এর আগে, ফ্রাঁসোয়া বাইরুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে লেকর্নু এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ফ্রান্সের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য গঠনে ব্যর্থ হওয়ায় লেকর্নু পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তিনি জানান, সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি হয়নি।
পদত্যাগ ভাষণে লেকর্নু বলেন, “যদি আরও বেশি আত্মত্যাগ ও নম্রতা থাকত, তাহলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত। দেশের স্বার্থকে সবসময় দলের ঊর্ধ্বে রাখতে হয়।”
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর বিরোধী দলগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালি হয় নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে, না হয় প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ চেয়েছে।
দলের প্রধান মারিন লে পেন বলেন, “এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টকে জবাবদিহি করতে হবে। হয় তাকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, না হয় পদত্যাগ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।”
বামপন্থী দল ফ্রান্স আনবোও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ দাবি করেছে। বাম, সোশ্যালিস্ট, গ্রিন ও কমিউনিস্ট দলগুলোর সমন্বয়ে নতুন জোট গঠনেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবরে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে, ফরাসি কোম্পানিগুলোর শেয়ার সূচক (CAC-40) প্রায় ২ শতাংশ কমে গেছে।
নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে অনেকেই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝে পাননি, এর মধ্যেই তারা তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। পরিবেশ বিষয়ক নতুন মন্ত্রী অ্যাগনেস প্যানিয়ার-রুনাচার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “এই সার্কাস দেখে আমি হতাশ।”
লেকর্নু’র মন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে, সাবেক অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লে মেইরকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনাটা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত লেগেছে। সমালোচকদের মতে, লে মেইরের দায়িত্ব পালনকালে ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি বেড়ে গিয়েছিল।
ফ্রান্স বর্তমানে বিশাল ঋণ সংকটের মধ্যে রয়েছে। লেকর্নু’র প্রধান কাজ ছিল এই পরিস্থিতিতে বাজেট পাস করা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ফ্রান্সের সরকারি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (১১৪ শতাংশ জিডিপি)।
সরকারি ব্যয়ের প্রায় ৭ শতাংশ শুধু ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যয় হয়। আগের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা বহাল রয়েছেন। তাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ব্রুনো রিতাইয়ো, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জঁ-নোয়েল বারো এবং বিচারমন্ত্রী হিসেবে জেরাল্ড ডারমানিন দায়িত্ব পালন করছেন।
গত বছর প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর আগাম নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকেই ফ্রান্সের রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে। পার্লামেন্টে চরম ডান ও বামপন্থী দলগুলোর সম্মিলিত আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২০টির বেশি। অন্যদিকে, মধ্যপন্থী ও রক্ষণশীল দলগুলোর আসন সংখ্যা ২১০।
উল্লেখ্য, নতুন সরকার গঠনের আগে লেকর্নু সব রাজনৈতিক দল ও ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। তিনি বিতর্ক এড়াতে পূর্বসূরিদের মতো বাজেট পাসের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস