ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের শেষ ডিজাইন করা বাড়ি, এখন থাকার জন্য ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
আমেরিকার স্থাপত্যকলার জগতে ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর ডিজাইন করা প্রায় ৫৩২টি স্থাপত্যকর্মের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে তাঁর জন্মস্থান উইসকনসিনে।
এই রাজ্যের আটটি স্থানে তাঁর কাজের নিদর্শন দেখা যায়, যার মধ্যে তাঁর প্রথম বাড়ি ও স্টুডিও ‘ট্যালিসিন’ অন্যতম। শিকাগোতে তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ১৮৮৭ সালে।
আশির দশকে তিনি অ্যারিজোনার স্কটসডেল-এ বসবাস করতে শুরু করেন এবং সেখানেই ‘ট্যালিসিন ওয়েস্ট’ তৈরি করেন। তবে তাঁর শেষ স্মৃতিচিহ্ন এখনও বিদ্যমান ওহাইও অঙ্গরাজ্যের উইলোবি হিলস-এ।
রিভাররক হাউস, ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের ডিজাইন করা শেষ আবাসিক ভবন। ১৯৫৯ সালে রাইটের মৃত্যুর পর তাঁর ডিজাইন করা এই বাড়ির নকশা পাওয়া যায়।
সম্প্রতি এটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
আবাসনটি এখন ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে একসঙ্গে ছয়জন থাকতে পারবেন। বাড়িটিতে তিনটি বেডরুম, একটি বাথরুম ও একটি অতিরিক্ত টয়লেট রয়েছে।
এখানে দুইটি কুইন সাইজের এবং দুইটি অতিরিক্ত লম্বা সিঙ্গেল বেড রয়েছে।
এই বাড়িটি ভাড়া নেওয়ার মাধ্যমে রাইটের স্থাপত্যশৈলী উপভোগ করা যাবে। ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, এখানে কোনো ভিড় বা বাধা নেই।
শান্ত পরিবেশে প্রকৃতির মাঝে এই বাড়িটিতে থাকার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
প্রায় ৩০ একর জায়গা জুড়ে লেক কাউন্টি বনের মধ্যে বাড়িটি অবস্থিত। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চ্যাগরিন নদী।
বাড়িটিতে একটি কাঠের তৈরি অগ্নিকুণ্ডও রয়েছে, যা এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে শহরের সুযোগ-সুবিধা থেকেও এটি খুব দূরে নয়।
ক্লিভল্যান্ড শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো, যেমন ক্লিভল্যান্ড মিউজিয়াম অফ আর্ট অথবা ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম থেকে এটি মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।
রিভাররক হাউস-এর বিশেষত্ব হলো, এটি হয়তো কখনোই তৈরি হতো না। শিল্পী ও শিক্ষক লুই পেনফিল্ড ১৯৫২ সালে রাইটকে তাঁর জন্য একটি বাড়ি ডিজাইন করতে বলেন।
পেনফিল্ডের উচ্চতা বেশি হওয়ায় রাইট তাঁর চিরাচরিত ‘ইউসোনিয়ান’ স্থাপত্যশৈলীতে কিছু পরিবর্তন আনেন। এক বছর পর যখন নির্মাণকাজ শুরু হয়, তখন একটি নতুন মহাসড়ক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়, যা পেনফিল্ডের জমির ওপর দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
তখন পেনফিল্ড, রাইটকে দ্বিতীয় একটি বাড়ি ডিজাইন করার জন্য অনুরোধ করেন। ৯১ বছর বয়সী রাইট, যিনি সাধারণত নতুন করে বাড়ি ডিজাইন করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, পেনফিল্ডের অনুরোধ ফেলতে পারেননি।
কারণ, পেনফিল্ড ছিলেন তাঁর পুরনো ক্লায়েন্ট।
৯ই এপ্রিল, ১৯৫৯ সালে রাইটের মৃত্যু হয়। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সপ্তাহখানেক পরে পেনফিল্ড পরিবার একটি অপ্রত্যাশিত চিঠি পান, যেখানে এই বাড়ির ডিজাইন করা ছিল।
রাইটের মৃত্যুর পর তাঁর টেবিলের ওপর নকশাটি পাওয়া গিয়েছিল।
তবে, রিভাররক হাউস-এর নির্মাণকাজ কয়েক দশক ধরে বন্ধ ছিল। অবশেষে, ২০১৮ সালে সারা ডাইকস্ট্রা নামের একজন নারী এই জমিটি কিনে নেন এবং তাঁর মা ডেবোরা ডাইকস্ট্রার সঙ্গে মিলে বাড়িটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউজ-হেরাল্ড’-এর খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি এখানে একটি অনুষ্ঠান হয়েছে, যেখানে রাইটের ডিজাইন করা এই বাড়ির নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
ডাইকস্ট্রা জানান, “আমরা যখন এই বাড়িটি তৈরি করতে শুরু করি, তখন নির্মাণ দলের প্রতি আমাদের নির্দেশ ছিল, যদি বর্তমান নির্মাণবিধি অথবা অন্য কোনো কারণে কোনো পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়, তবে তা যেন বাড়ির বাইরের কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে করা হয়। এই বাড়ির ডিজাইন এবং শৈল্পিক দিকটি ১৯৫৯ সালে যেমন ছিল, তেমনই রাখতে হবে।”
প্রতি রাতের জন্য এই বাড়িটির ভাড়া সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৯,০০০ টাকা) এবং শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ১,০০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,১০,০০০ টাকা)। সাত রাতের জন্য থাকতে চাইলে ৫,৫০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬,০৯,০০০ টাকা) খরচ করতে হবে।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন riverrockhouse.com।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার