ফ্রেড ও রোজ ওয়েস্ট কী করেছিল? ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলারের ভয়ঙ্কর কীর্তি!

ব্রিটিশ ইতিহাসে নৃশংস অপরাধের সাক্ষী, কুখ্যাত সিরিয়াল কিলিং দম্পতি ফ্রেড এবং রোজ ওয়েস্টের বীভৎস কাহিনী।

যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে নৃশংসতম অপরাধগুলোর একটি ঘটিয়েছিল ফ্রেড ওয়েস্ট এবং তার স্ত্রী রোজ ওয়েস্ট। এই দম্পতি তাদের দুই দশকের বেশি সময়ে অন্তত ১০ জন তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যা করে। তাদের এই ভয়ংকর অপরাধের সাক্ষী ছিল ইংল্যান্ডের গ্লুচেস্টারের একটি বাড়ি, যা ‘হ্যারর হাউস’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

অবশেষে, তাদের অপরাধের পর্দা ফাঁস হয় এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়।

ফ্রেড ওয়েস্টের প্রথম জীবনের কিছু ঘটনা ছিল উদ্বেগের কারণ। ১৯৬২ সালে ক্যাথরিন ‘রেনা’ কোস্টেলোকে বিয়ে করার আগে তিনি বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রোজ ওয়েস্টের সঙ্গে পরিচিত হন। তখন রোজের বয়স ছিল ১৫ বছর।

ফ্রেড ছিলেন বিবাহিত এবং দুটি সন্তানের বাবা। রোজ তাদের বাড়িতে শিশুদের দেখাশোনার কাজ শুরু করেন এবং একসময় তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

তাদের বিবাহিত জীবন শুরুর কিছুকাল পরেই, এই দম্পতি নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭০ এর দশকে তাদের অপরাধের মাত্রা বাড়তে থাকে। তারা নারী ও শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাত এবং তাদের হত্যা করত।

তাদের শিকারদের মধ্যে ছিল তরুণী এবং অল্পবয়সী মেয়েরা। এই দম্পতি তাদের শিশুদেরও নিগ্রহ করত, যার ফলস্বরূপ তাদের সন্তানদের হাসপাতালে যেতে হয়েছিল ৩১ বার।

এই দম্পতির নৃশংসতার শিকারদের মধ্যে ছিল তাদের নিজেদের সন্তানও। তাদের মেয়ে চার্মেইনকে হত্যা করা হয়েছিল, যখন ফ্রেড কারাগারে ছিলেন। পরে, ফ্রেড ফিরে এসে তার স্ত্রীকে সাহায্য করে চার্মেইনের মৃতদেহ বাড়ির নিচে পুঁতে ফেলেন।

১৯৮৭ সালে, তাদের আরেক মেয়ে হিদারকে তারা হত্যা করে।

হিদার তার বাবা-মায়ের অত্যাচারের কথা বন্ধুদের জানালে, তারা ক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। হিদারকে হত্যার পর, ফ্রেড তার আরেক মেয়ে লুইসের ওপর নির্যাতন শুরু করে।

লুইস তার এক বন্ধুর কাছে সব কথা খুলে বললে, বন্ধুটি পুলিশের কাছে খবর দেয়।

পুলিশি তদন্তে জানা যায়, চার্মেইন, কোস্টেলো এবং হিদার নামের মেয়েরা নিখোঁজ হয়েছে। এরপর, ১৯৯৪ সালে ফ্রেড ও রোজকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ আনা হয়। তাদের শিশুদেরকে সরকারি হেফাজতে রাখা হয়।

মামলার শুনানির সময়, ফ্রেড এবং রোজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, কারণ তাদের মেয়েরা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি। কিন্তু গোয়েন্দা কনস্টেবল হ্যাজেল সাভেজ, হিদারকে খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান এবং ওয়েস্ট পরিবারের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর অনুমতি পান।

তল্লাশিতে তাদের বাড়ি থেকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফ্রেড হিদারকে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং তার দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৯৫ সালের শুরুতে বিচার শুরুর আগেই, ফ্রেড আত্মহত্যা করেন।

নভেম্বর ১৯৯৫ সালে, রোজ ওয়েস্টের বিচার শুরু হয় এবং সাত সপ্তাহ ধরে চলা শুনানির পর, তাকে ১০টি হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং প্যারোলের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।

বর্তমানে, রোজ ওয়েস্ট ইংল্যান্ডের একটি কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।

তথ্যসূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *