রান্নাঘরের সময় বাঁচানো ও খাবার নষ্টের বিরুদ্ধে লড়াই: আপনার ফ্রিজকে কাজে লাগান।
আজকের বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে খাবার নষ্ট হওয়া মানে সরাসরি ক্ষতি। তাই খাবার সংরক্ষণে ফ্রিজের সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।
সঠিক উপায়ে ফ্রিজ ব্যবহার করলে একদিকে যেমন সময় বাঁচে, তেমনই খাবারের অপচয়ও রোধ করা যায়। আসুন, জেনে নিই কীভাবে আপনার ফ্রিজটিকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
পরিকল্পনা মাফিক কাজ করুন:
ফ্রিজ ব্যবহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল পরিকল্পনা। একসাথে অনেক খাবার রান্না করে সেগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন। মাংস, সবজি এবং ফল – সবকিছুই ফ্রিজে সংরক্ষণ করার আগে পরিমাণ মতো ভাগ করে রাখলে সুবিধা হয়।
বিশেষ করে যারা চাকরি করেন বা ব্যস্ত থাকেন, তাদের জন্য এটা সময় বাঁচানোর দারুণ উপায়।
কোন খাবারগুলো ফ্রিজে ভালো থাকে?
শেফ লিসা মার্লের মতে, স্যুপ, স্ট্যু, কারি এবং বেক করা খাবারগুলো ফ্রিজে রাখলে তাদের স্বাদ ও গঠন বজায় থাকে।
বড় করে রান্না করে ফ্রিজে রাখলে পরবর্তীতে তা গরম করে পরিবেশন করা যায়। এছাড়াও, বিভিন্ন সবজি, যেমন – ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, এমনকি কাঁচকলাও ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
সঠিকভাবে প্যাকেজ করুন:
খাবার ফ্রিজে রাখার আগে প্যাকেজিংয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। একবার রান্না করার পর, খাবারগুলো আপনি যে পরিমাণে খাবেন সেই অনুযায়ী ভাগ করুন।
এতে করে একটি অংশ বের করে নিলে, বাকিটা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
৫০০ গ্রাম মাংস ছোট ছোট অংশে ভাগ করে, একটি ট্রেতে রেখে প্রথমে ফ্রিজ করুন। এরপর শক্ত হয়ে গেলে, এয়ার টাইট ব্যাগে ভরে রাখুন।
এতে করে মাংস জমাট বাঁধার কারণে একটার সাথে অন্যটা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ফ্রিজার বার্ন থেকে বাঁচুন:
ফ্রিজারে খাবার রাখার সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ‘ফ্রিজার বার্ন’। এটি হয় যখন খাবার ঠান্ডা, শুকনো বাতাসের সংস্পর্শে আসে এবং এর ফলে খাবারে জলীয় উপাদান কমে যায় ও বরফের ক্রিস্টাল তৈরি হয়।
এর থেকে বাঁচতে হলে, খাবার ফ্রিজে রাখার আগে সঠিকভাবে প্যাক করতে হবে। প্রথমে খাবার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসতে দিন।
এরপর ভ্যাকুয়াম সিল করা ব্যাগ, ফ্রিজার-সেফ কন্টেইনার বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করুন।
লেবেল ব্যবহার করুন:
প্যাকেট করার পর খাবারের নাম এবং তারিখ লিখে লেবেল করুন। বাজারে ফ্রিজের জন্য লেবেল পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়া, বাজারে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য, মোছা যায় এমন লেবেলও পাওয়া যায়।
কতদিন সংরক্ষণ করবেন?
খাবার কতদিন ফ্রিজে রাখা যাবে, তা নির্ভর করে খাবারের ধরনের ওপর। ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি (এফএসএ)-এর মতে, মাংস ২-৩ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
বেক করা খাবার, ফল এবং সবজি সাধারণত ৪ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
অন্যান্য টিপস:
- আপনি যদি কারো জন্য বিশেষ খাবার তৈরি করেন, তাহলে প্যাকেটের ওপর উপাদানগুলো লিখে রাখুন, বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জি আছে।
- যেসব ফলে প্রচুর জল থাকে, সেগুলো রান্নার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। টমেটো এবং নরম ফলের ক্ষেত্রে, ফ্রিজে রেখে পরে রান্না বা বেক করা যেতে পারে। আদা, রসুন ও কাঁচামরিচও একইভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
- ভাত দিয়ে রান্না করা খাবার, যেমন – বিরিয়ানি বা ফ্রাইড রাইস, ফ্রিজে রাখলে তার স্বাদ ও গঠন নষ্ট হয়ে যায়। তাই, রান্নার পরে সাথে সাথে ফ্রিজে না রেখে, গরম গরম পরিবেশন করাই ভালো।
- আইস ট্রে ব্যবহার করে স্টক বা অন্যান্য তরল জমাট বাঁধতে পারেন। ছোট বাচ্চার খাবারের জন্য সস তৈরি করে আইস কিউব আকারে জমাট বাঁধিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- রসুন, আদা, কাঁচামরিচ একসঙ্গে বেটে বা কুচি করে সামান্য তেল অথবা জলের সাথে মিশিয়ে আইস ট্রেতে রাখলে অনেক দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
গলিয়ে নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি:
এফএসএ-এর মতে, ফ্রিজার খাবার সংরক্ষণের একটি প্রক্রিয়া, যা খাবারকে খারাপ হওয়া থেকে বাঁচায়।
খাবার গলানোর সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হল, খাবারটি আগের দিন রাতে ফ্রিজ থেকে বের করে, নরমাল তাপমাত্রায় রাখা। এছাড়াও, দ্রুত গলানোর জন্য, খাবার একটি জলনিরোধী ব্যাগে রেখে ঠান্ডা জলের মধ্যে রাখতে পারেন।
প্রতি ৩০ মিনিট পর জল পরিবর্তন করুন। খুব তাড়াহুড়ো থাকলে, মাইক্রোওয়েভের ডিফ্রস্ট মোড ব্যবহার করতে পারেন, তবে খাবারটি গরম করার সাথে সাথেই পরিবেশন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের মাধ্যমে একদিকে যেমন খাবার নষ্ট হওয়া রোধ করা যায়, তেমনই রান্নার সময়ও বাঁচানো যায়।
উপসংহার:
ফ্রিজের সঠিক ব্যবহার খাদ্য অপচয় রোধে এবং সময় বাঁচাতে পারে। তাই, সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললে, আপনার ফ্রিজ হতে পারে আপনার রান্নাঘরের এক অপরিহার্য অংশীদার।
তথ্য সূত্র: The Guardian