লুভরের চুরি যাওয়া রত্নের আড়ালে সাম্রাজ্যবাদের কালো ছায়া!

ফ্রান্সের মুকুটমণি: চুরির ঘটনা ও ঔপনিবেশিক অতীতের বিতর্ক।

প্যারিসের বিখ্যাত লুভর জাদুঘর থেকে ফরাসি সাম্রাজ্যের মূল্যবান মুকুটমণি চুরির ঘটনা শুধু একটি সাধারণ অপরাধমূলক কাজ নয়, বরং এর মাধ্যমে সামনে এসেছে এক গভীর ঐতিহাসিক বিতর্ক। এই মূল্যবান রত্নগুলির উৎস নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, যা ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতিকে আবার জাগিয়ে তুলেছে।

চুরি হওয়া এই রত্নগুলি তৈরি হয়েছিল ফ্রান্সে, কিন্তু এর উপাদানগুলি—যেমন, শ্রীলঙ্কা থেকে আসা নীলকান্তমণি, ভারত ও ব্রাজিল থেকে সংগ্রহ করা হীরা, পারস্য উপসাগর ও ভারত মহাসাগর থেকে সংগৃহীত মুক্তা এবং কলম্বিয়ার পান্না—এগুলির যোগসূত্র সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মূল্যবান পাথরগুলির সংগ্রহ পদ্ধতি নিয়ে লুভর জাদুঘরের আরও বেশি স্বচ্ছ হওয়া উচিত। তাদের মতে, সংগ্রহগুলি কোথা থেকে এসেছে, কীভাবে এসেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা উচিত।

ঐতিহাসিকদের মতে, এই রত্নগুলি তৈরি হয়েছে ফরাসি কারিগরদের হাতে, কিন্তু এর কাঁচামাল এসেছে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের মাধ্যমে। এই সাম্রাজ্যগুলি আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সম্পদ সংগ্রহ করে ইউরোপের খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন দেশ তাদের ঐতিহাসিক সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পশ্চিমা জাদুঘরগুলির কাছে দাবি জানাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হল ‘কোহিনূর’ হীরা।

এই হীরাটি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের টাওয়ার অফ লন্ডনে রাখা হয়েছে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে এটি ফেরত চেয়ে আসছে। একইভাবে, গ্রিস পার্থেনন মার্বেল, মিশর রোসেটা স্টোন এবং নেফারতিতি মূর্তি ফেরতের দাবি জানাচ্ছে।

ফ্রান্স সরকারও কিছু ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর উদ্যোগে বেনিনকে ২৬টি রাজকীয় সম্পদ এবং সেনেগালকে কিছু জিনিস ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মাদাগাস্কার তাদের রানি রানভালোনা তৃতীয়ের মুকুট পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীর এবং জটিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাদুঘরগুলির উচিত তাদের সংগ্রহ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া। এর মধ্যে রত্নগুলি কোথা থেকে এসেছে, কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এতে কার লাভ হয়েছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে জানানো দরকার।

এর ফলে জাদুঘরের দর্শকদের মধ্যে এইসব বস্তুর সামাজিক ইতিহাস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে। লুভর জাদুঘরের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বর্তমানে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

এটি কেবল ফ্রান্সের ঘটনা নয়, বরং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। জাদুঘরগুলিকে তাদের সংগ্রহ সম্পর্কে আরও বেশি খোলামেলা এবং স্বচ্ছ হতে হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *