ফরাসি ওপেনে প্রযুক্তি নাকি মানুষ? নোভাক জোকোভিচের ভিন্নমত। প্যারিসের ক্লে কোর্টে যখন টেনিসের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই চলছে, তখন মাঠের খেলার বাইরেও চলছে অন্য এক আলোচনা।
আধুনিক প্রযুক্তিকে পাশে ঠেলে ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরেছে ফরাসি ওপেন কর্তৃপক্ষ। টুর্নামেন্টে এখনো লাইন কলিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষ, যেখানে বিশ্বের অন্যান্য গ্র্যান্ড স্ল্যামগুলি, যেমন- উইম্বলডন, ইউএস ওপেন, এমনকি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও ইলেকট্রনিক লাইন কলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সরাসরি দ্বিমত পোষণ করেছেন টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ। বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে, যেখানে সবকিছুতেই প্রযুক্তির ছোঁয়া, সেখানে খেলার মাঠেও এর প্রভাব অনস্বীকার্য।
ফুটবল, ক্রিকেট বা বেসবলের মতো খেলাগুলোতেও এখন প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। টেনিসেও এসেছে এই পরিবর্তন, তবে ফরাসি ওপেন কর্তৃপক্ষ যেন কিছুটা রক্ষণশীল।
ঐতিহ্যকে ধরে রাখার এই মানসিকতাকে ভালোভাবে দেখছেন না জোকোভিচ। ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী জোকোভিচ মনে করেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে।
খেলার ফলাফল আরও নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা যায় এবং এতে সময়ও বাঁচে। খেলোয়াড়দের বিতর্ক বা মাঠের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়।
২০২০ সালের ইউএস ওপেনে খেলার মাঝে অসাবধানতাবশত এক অফিসারের গায়ে বল লাগার কারণে জোকোভিচকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই টুর্নামেন্টে কেবল প্রধান দুটি কোর্টে লাইন জাজ রাখা হয়েছিল, বাকিগুলোতে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা ছিল।
এই ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে জোকোভিচের উপলব্ধি, প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে খেলার স্বচ্ছতা বাড়ে। ফরাসি ওপেনের এই সিদ্ধান্তে অনেকে বিস্মিত।
কারণ, আধুনিক টেনিসে প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সময়ের দাবি। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর উইম্বলডনেও লাইন জাজদের পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে।
এমনকি ক্লে কোর্টের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা কিছু টুর্নামেন্টে, যেমন- ডব্লিউটিএ এবং এটিপি’র ইভেন্টগুলোতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফরাসি টেনিস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট জিল মোরটনের মতে, তাদের কর্মকর্তাদের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তবে খেলোয়াড়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
২০১৯ সালের ইউএস ওপেন জয়ী কোকো গফ মনে করেন, প্রযুক্তি থাকলে সেটি ব্যবহার করা উচিত। একই সুর শোনা গেছে স্তেফানোস সিতসিপাসের কণ্ঠেও।
খেলায় নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তির বিকল্প নেই, এমনটাই মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রায়ই সিদ্ধান্তের যথার্থতা নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখা যায়।
অনেক সময় দেখা যায়, খেলোয়াড়রা নিজেদের মোবাইল ফোনে বলের ছবি তুলে বিতর্কের অবসান ঘটাতে চাইছেন। আরিনা সাবালেঙ্কা ও আলেকজান্ডার জেরেভের মতো শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দেরও এমনটা করতে দেখা গেছে।
তবে, কিছু খেলোয়াড় এখনো মানব বিচারকদের প্রতি আস্থা রাখেন। তাদের মতে, খেলার আকর্ষণ বজায় রাখতে মানুষের বিচার অপরিহার্য।
খেলার উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে মানব ত্রুটি হতেই পারে, কিন্তু প্রযুক্তির সাহায্য নিলে সেই সম্ভাবনা কমে আসে। সবশেষে, ফরাসি ওপেনের এই সিদ্ধান্ত টেনিসে প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যের মধ্যে চলমান বিতর্কেরই একটি অংশ।
ভবিষ্যতে এই বিতর্কের জল কতদূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস