আতঙ্ক! ফরাসি আদালতে সার্জন-এর ২০ বছরের জেল, শিউরে ওঠা ঘটনা!

ফ্রান্সের একজন অবসরপ্রাপ্ত সার্জনের বিরুদ্ধে রোগীদের ধর্ষণের অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। বুধবার দেশটির একটি আদালত ৭৪ বছর বয়সী জোয়েল লে স্কোয়ারনেক নামের ওই ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে এই রায় দেয়।

বিগত ২৫ বছর ধরে তিনি রোগীদের ওপর যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ করেছেন। আদালতে দেওয়া নিজের স্বীকারোক্তিতে লে স্কোয়ারনেক জানান, তিনি ‘নৃশংস কাজ’ করেছেন।

এই ঘটনা ফ্রান্সে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং দেশের স্বাস্থ্যখাতে উপযুক্ত নজরদারির অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জানা যায়, ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে ছিলেন শিশু।

এই মামলাটি ফ্রান্সের ইতিহাসে শিশুদের প্রতি যৌন অপরাধের সবচেয়ে বড় বিচারের একটি। লে স্কোয়ারনেকের বিরুদ্ধে ২৯৯ জন ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

ফেব্রুয়ারিতে মামলার শুরুতে লে স্কোয়ারনেক বলেছিলেন, “আমি জানি, আমি যে ক্ষতি করেছি, তা পূরণ হওয়ার নয়। আমি এই মানুষগুলো এবং তাদের স্বজনদের কাছে আমার কৃতকর্ম এবং তার ফল স্বীকার করছি।”

২০১৭ সালে ৬ বছর বয়সী এক প্রতিবেশীকে ধর্ষণের অভিযোগে পুনরায় গ্রেফতার হওয়ার পর লে স্কোয়ারনেকের অপরাধের বিস্তারিত তথ্য সামনে আসে। পুলিশের অনুসন্ধানে তার কাছ থেকে এমন কিছু ডায়েরি উদ্ধার করা হয়, যেখানে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে আসা রোগীদের ওপর চালানো ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিবরণ ছিল।

এছাড়াও, তার কাছ থেকে সেক্স ডল, পরচুলা এবং শিশু পর্নোগ্রাফির ভান্ডারও পাওয়া যায়। আদালতের রায় ঘোষণার আগে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আদালতের বাইরে সমবেত হন।

তাদের হাতে ছিল সাদা কাগজের একটি ব্যানার, যেখানে ভুক্তভোগীদের প্রত্যেকের জন্য একটি করে কালো সিলুয়েট আঁকা ছিল। কিছু কাগজে ভুক্তভোগীর নাম ও বয়স লেখা ছিল, আবার কারো ক্ষেত্রে ‘বেনামী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

লে স্কোয়ারনেক এর আগেও ধর্ষণের দায়ে সাজা ভোগ করছেন। ২০২০ সালে, তিনি প্রতিবেশী এক শিশুকে, নিজের দুই ভাইজি এবং ৪ বছর বয়সী এক রোগীর ওপর ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন চালানোর দায়ে ১৫ বছরের কারাদণ্ড পান।

ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবার জনসমক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন স্থানীয় ও জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ লে স্কোয়ারনেককে থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল। ২০০৫ সালে, শিশু যৌন নির্যাতনের ছবি ডাউনলোড করার অভিযোগে তার সাজা হয়েছিল, তবে তাকে কারাগারে যেতে হয়নি।

এরপরও তিনি সরকারি হাসপাতালে কাজ চালিয়ে যান। ফরাসি এই বিচার প্রক্রিয়াটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন ফ্রান্সে যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ছে।

এর আগে, ডমিনিক পেলিকটকে তার স্ত্রীকে অচেতন করে অনেক পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। মামলার তদন্তকারী স্থানীয় কৌঁসুলি জানিয়েছেন, যারা এই অপরাধগুলো প্রতিরোধ করতে পারতেন, তাদের কারো কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখতে একটি পৃথক তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *