শুক্রবার ১৩ তারিখ: ভয়ঙ্কর দিনে কী হয়?

শুক্রবার ১৩ তারিখ: একটি বিশ্বজনীন কুসংস্কারের মনস্তত্ত্ব।

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে প্রচলিত কুসংস্কারগুলি মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। আমাদের সমাজে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, শুভ-অশুভ নিয়ে নানা ধরনের ধারণা প্রচলিত আছে।

বিড়াল রাস্তা কাটলে যাত্রা অশুভ হতে পারে, কিংবা রাতের বেলায় নখ কাটা উচিত নয়—এমন অনেক বিশ্বাস আমরা লালন করি। এই ধরনের ধারণাগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে এবং অনেক সময় আমাদের আচরণেও পরিবর্তন আনে।

এবার আসা যাক একটি বিশেষ দিনের কথায়, যা সারা বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করে—শুক্রবার ১৩ তারিখ।

পশ্চিমের দেশগুলিতে শুক্রবার ১৩ তারিখ একটি অশুভ দিন হিসেবে পরিচিত। এই তারিখে খারাপ কিছু ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তবুও এই দিনের ভীতি মানুষের মনে গভীর ভাবে প্রোথিত। প্রতি বছর ক্যালেন্ডারে এই তারিখটি ফিরে আসে, এবং সেই সময় এই দিনের কুফল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

২০২৩ সালে দুটি শুক্রবার ১৩ তারিখ ছিল, একটি জানুয়ারিতে এবং অন্যটি অক্টোবরে। ২০২৪ সালেও দুটি শুক্রবার ১৩ তারিখ দেখা গেছে, একটি সেপ্টেম্বরে এবং অন্যটি ডিসেম্বরে।

কিন্তু কেন এই তারিখটি এত ভয়ের? এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ।

এর মধ্যে একটি প্রধান কারণ হলো ধর্মীয় বিশ্বাস। বাইবেলের একটি ঘটনার সঙ্গে এই দিনের সম্পর্ক রয়েছে।

যিশুকে শুক্রবারেই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, আর সেই কারণে এই দিনটিকে অশুভ মনে করা হয়। তাছাড়া, যিশুর শেষ রাতের ভোজে ১৩ জন অতিথি ছিলেন, যাদের মধ্যে যিহূদা ছিলেন, যিনি যিশুকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। এই দুটি ঘটনার সম্মিলিত প্রভাবে শুক্রবার ১৩ তারিখ একটি ভীতিকর তারিখে পরিণত হয়েছে।

তবে, মনস্তত্ত্ববিদরা এই ভয়ের অন্য একটি দিক তুলে ধরেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আচরণ বিজ্ঞানী, জেন রাইসেনের মতে, কুসংস্কারগুলি এমনকি যারা এতে বিশ্বাস করে না, তাদেরও প্রভাবিত করতে পারে।

তার গবেষণা বলছে, খারাপ কিছু ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে—এমনটা বিশ্বাস করলে, সেই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি মনে করে যে সে কোনো দুর্ঘটনায় পড়বে না, তবে তার দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

আমাদের মনের গভীর কোণে লুকিয়ে থাকা এই ভয়, শুক্রবার ১৩ তারিখের ভীতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

অন্যদিকে, কিছু মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, কুসংস্কারগুলি আমাদের জীবনে শৃঙ্খলা আনে।

যখন আমরা কোনো নিয়ম জানি এবং সে অনুযায়ী চলি, তখন সবকিছু সহজ মনে হয়। তাই, শুক্রবার ১৩ তারিখে অনেকেই তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে, পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, শুক্রবার ১৩ তারিখে দুর্ঘটনার হার অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি নয়।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, এই দিনে অস্ত্রোপচার করলে ফলাফলের কোনো ভিন্নতা হয় না। এমনকি, জরুরি বিভাগে রোগীর সংখ্যাও বাড়ে না।

সারা বিশ্বে শুক্রবার ১৩ তারিখ নিয়ে এত আলোচনা চললেও, কিছু দেশে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়।

স্পেনে শুক্রবার ১৩ তারিখের পরিবর্তে মঙ্গলবার ১৩ তারিখকে অশুভ মনে করা হয়। ইতালিতে ১৩ সংখ্যাটিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না, বরং ১৭ সংখ্যাটি তাদের কাছে ভয়ের কারণ।

কুসংস্কারগুলি হয়তো নিছকই কিছু ধারণা, কিন্তু মানুষের মনে এর গভীর প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। তাই, শুক্রবার ১৩ তারিখ হোক বা অন্য কোনো দিন, আমাদের নিজেদের মানসিক শান্তির জন্য সতর্ক থাকা ভালো।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *