আজকের দিনে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গরমে খাবার সতেজ রাখা থেকে শুরু করে ঠান্ডা পানীয় উপভোগ করা—সবকিছুতেই এর জুড়ি মela ভার।
কিন্তু এই অত্যাধুনিক যন্ত্রটির শুরুটা কেমন ছিল, জানেন কি? খাদ্য সংরক্ষণে ফ্রিজের ধারণা বহু পুরনো।
প্রাচীনকালে মানুষ বরফের ঘর তৈরি করত, যেখানে খাবার জমা করে রাখা হতো। তেমনই একটি ব্যবস্থা ছিল প্রাচীন পারস্যে, যেখানে ‘ইয়াকচাল’ নামে এক ধরনের বরফের ঘর তৈরি করা হতো।
আধুনিক রেফ্রিজারেশনের ধারণা প্রথম আসে আঠারো শতকে। ১৭৪৮ সালে, গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম কুলেন প্রথম এই বিষয়ে একটি ধারণা দেন।
এরপর, উদ্ভাবকদের হাত ধরে ধীরে ধীরে এর উন্নতি হতে থাকে। ১৮৩৫ সালে, জేకব পারকিন্স এবং অলিভার ইভান্স মিলে বাষ্পীয় সংকোচন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথম কার্যকরী ফ্রিজ তৈরি করেন।
ফ্রিজের বাণিজ্যিক ব্যবহারও শুরু হয় উনিশ শতকে। ১৮৫০ সালে আলেকজান্ডার টোয়াইনিং প্রথম বাণিজ্যিক রেফ্রিজারেটর তৈরি করেন, যা মূলত ব্রুয়ারিগুলির (brewery) জন্য ব্যবহৃত হত।
সময়ের সাথে সাথে, কার্ল ভন লিন্ডের মতো বিজ্ঞানীরা অ্যামোনিয়া-চালিত ফ্রিজ তৈরি করেন, যা রেফ্রিজারেশনকে আরও উন্নত করে।
বৈদ্যুতিক ফ্রিজের ধারণা আসে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে। ১৯১৩ সালে, ফ্রেড ডব্লিউ. উলফ প্রথম ঘরোয়া বৈদ্যুতিক ফ্রিজ তৈরি করেন।
এর কয়েক বছর পরেই, ১৯১৮ সালে উইলিয়াম সি. ডুরান্ট প্রথম স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘরোয়া ফ্রিজ উন্মোচন করেন। সেই সময় এর দাম ছিল প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ ডলার, যা আজকের দিনে ৭০০০ থেকে ১৪০০০ ডলারের সমান!
ফ্রিজের ইতিহাস শুধু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের গল্প নয়, এটি আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনেরও সাক্ষী। স্মার্ট ফ্রিজের আগমন সেই ধারণাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।
২০০০ সালে এলজি (LG) প্রথম ওয়াইফাই-যুক্ত স্মার্ট ফ্রিজ বাজারে আনে, যা সময়ের সাথে আরও উন্নত হয়েছে।
এখনকার স্মার্ট ফ্রিজগুলো শুধু খাবার ঠান্ডা রাখার যন্ত্র নয়, বরং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসে, যেমন—দরজা থেকেই মেসেজ দেখা বা উত্তর দেওয়া ইত্যাদি।
ফ্রিজের সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা খুবই জরুরি। সাধারণত, আদর্শ তাপমাত্রা ৩°C থেকে ৫°C (৩৭°F থেকে ৪০°F) এর মধ্যে হওয়া উচিত।
আধুনিক ফ্রিজগুলোতে স্বয়ংক্রিয় ডিফ্রস্ট (auto-defrost) ব্যবস্থা থাকে, যা বরফ জমতে দেয় না।
একটি ফ্রিজের গড় আয়ুষ্কাল ১০ থেকে ১৫ বছর। তবে, ভালো মানের ফ্রিজ ২০ বছর পর্যন্তও টিকতে পারে।
বাজারে বিভিন্ন আকারের ফ্রিজ পাওয়া যায়। সাধারণত, একটি ফ্রিজের প্রস্থ ৭১ থেকে ১০১ সেন্টিমিটার, উচ্চতা ১৪৭ থেকে ১৮২ সেন্টিমিটার এবং গভীরতা ৭১ থেকে ৮৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ফ্রিজ পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনের জন্য খুব জরুরি। ফ্রিজের হাতল প্রায়ই পরিষ্কার করা হয় না, যে কারণে সেখানে ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু জমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে, সব খাবার ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। আলু, টমেটো এবং কলা—এই ধরনের কিছু খাবার ফ্রিজে রাখলে তাদের স্বাদ এবং গঠন নষ্ট হয়ে যায়।
বাংলাদেশেও এখন ফ্রিজের ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষ করে, গরমকালে খাবার সতেজ রাখতে এর গুরুত্ব অনেক।
বাজারে এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্রিজ পাওয়া যায়, যা মানুষের জীবনকে আরও সহজ করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়ালটন, মিনিস্টার, যমুনা-র মতো দেশীয় ব্র্যান্ডগুলি উল্লেখযোগ্য।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure