জার্মানিতে এক অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে। দেশটির চ্যান্সেলর হওয়ার জন্য কনজারভেটিভ নেতা ফ্রিডরিশ মার্চ-এর প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো প্রার্থী প্রথমবার ভোটে জয়লাভ করতে ব্যর্থ হলেন।
মঙ্গলবার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটে তিনি প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি।
ফ্রিডরিশ মার্চ, যিনি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (CDU)-এর নেতা, ৬৩০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র ৩১০ জনের সমর্থন পান। চ্যান্সেলর হতে হলে তার কমপক্ষে ৩১৬ ভোটের প্রয়োজন ছিল।
ভোটের ফল প্রকাশের পর জার্মানির শেয়ার বাজারে দরপতন হয়, যা দেশটির অর্থনীতির উপর উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। প্রধান জার্মান কোম্পানিগুলোর সূচক DAX ১.৮% কমে যায়।
জার্মানিতে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া বেশ জটিল। সাধারণত, চ্যান্সেলর নির্বাচনের পর সরকার গঠিত হয়। তবে এক্ষেত্রে ফলাফল ভিন্ন হওয়ায় এখন নতুন করে আলোচনা শুরু হবে।
মার্চ এর দল অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। তবে এই প্রক্রিয়া কত দিন চলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ-এর দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটস (SPD) মার্চ-এর জোটের অংশীদার।
জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে এই পরাজয়কে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো প্রার্থী প্রথমবার ভোটে জিততে ব্যর্থ হলেন।
অনেকের মতে, এর কারণ হলো জোটের মধ্যেকার দুর্বলতা। গোপন ব্যালটে ভোট হওয়ায় ঠিক কারা মার্চকে সমর্থন করেননি, তা জানা যায়নি।
জার্মানির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্পর্কও এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জার্মানির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেশটি ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্যকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া, জার্মানির অর্থনীতি এবং অভিবাসন নীতি নিয়েও আলোচনা চলছে।
জার্মানিতে চ্যান্সেলর নির্বাচন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যদি কোনো প্রার্থী ১৪ দিনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে প্রেসিডেন্ট হয় নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন, অথবা নতুন নির্বাচনের ঘোষণা করতে পারেন।
এদিকে, জার্মানির রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চরম-ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (AfD)-এর উত্থান। এই দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সম্পর্ক নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক AfD-কে সমর্থন করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্চ যদি দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হতে পারেন, তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত অনিশ্চয়তা কাটেনি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস