ফ্রেন্ডস: মানুষ নাকি অন্য গ্রহের? পুরোনো শো দেখলে!

এক সময়ের জনপ্রিয় মার্কিন টিভি সিরিজ ‘ফ্রেন্ডস’-এর গল্পে মাতৃত্ব এবং শিশুদের প্রতি ধারণাগত দুর্বলতা নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন লেখক ও সাংবাদিক। নব্বইয়ের দশক থেকে দুই হাজার সালের শুরুর দিকে প্রচারিত এই ধারাবাহিকটিতে মা ও শিশুদের প্রতি যে ধরনের চিত্রায়ণ করা হয়েছে, তা বাস্তবতার থেকে অনেক দূরে ছিল বলেই মনে করেন তিনি।

বিশেষ করে সন্তান জন্ম দেওয়া এবং শিশুদের প্রতি চরিত্রগুলোর আচরণ ছিল বেশ অস্বাভাবিক।

পশ্চিমি বিশ্বে ‘ফ্রেন্ডস’ একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম। এই সিরিজের প্রধান চরিত্রগুলো— র‍্যাচেল, মনিকা, ফিবি, চ্যান্ডলার, জোই ও রস—তাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে প্রায়ই আলোচনায় থাকতেন।

লেখক মনে করেন, সিরিজটিতে শিশুদের প্রতি মনোযোগের অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো।

উদাহরণস্বরূপ, প্রসবের পরপরই যেখানে একজন মায়ের বিশ্রাম ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের প্রয়োজন, সেখানে র‍্যাচেলকে দেখা যায় মেকআপ করে, হাই হিল পরে বন্ধুদের সঙ্গে কফি শপে গল্প করতে।

জন্মের কয়েক সপ্তাহ পরেই যেন তিনি পুরনো রূপে ফিরে এসেছেন।

আবার, ফিবি যখন একসঙ্গে তিনটি সন্তানের জন্ম দেন, তখনও তার চারপাশের বন্ধুদের হাসিখুশি আড্ডা দেখা যায়, যা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।

লেখক আরও উল্লেখ করেন, সিরিজের একটি দৃশ্যে রস-এর সন্তান বেনকে চিকিৎসকের মাধ্যমে ডেলিভারি করানো হয়, যেখানে সবকিছু পর্দার আড়ালে ছিল।

আশির দশকের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘কোল্ড ফিট’-এর একটি দৃশ্যের কথা উল্লেখ করে লেখক বলেন, শিশুদের প্রতি তখনকার দিনের নির্মাতাদের ধারণা কতটা কম ছিল, তা বোঝা যায়।

যেখানে দেখা যায়, সন্তানকে খাবার খাওয়াতে গিয়ে মা অস্থির হয়ে পড়ছেন, কিন্তু শিশুর মুখে রয়েছে একটি ডামি, যার কারণে সে খাবার খেতেই পারছে না।

লেখক মনে করেন, এই ধরনের ভুলগুলো সম্ভবত নির্মাতা দলের শিশুদের প্রতি মনোযোগের অভাবের কারণে হয়েছে।

তবে, বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন অনেক টিভি শো তৈরি হয়েছে, যেখানে মাতৃত্ব এবং শিশুদের প্রতি আরও বাস্তবসম্মত চিত্র ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।

‘মাদারল্যান্ড’, ‘দ্য লেটডাউন’, ‘ট্রাইয়িং’, ‘ক্যাটাস্ট্রফি’, ‘বেটার থিংস’ এবং ‘ব্রিডার্স’-এর মতো সিরিজগুলোতে মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন বিষয়, যেমন—শিশুদের কান্না, মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা—এগুলো আরও ভালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

লেখকের মতে, এর প্রধান কারণ হলো, বর্তমানে নারীরা টেলিভিশন নির্মাণ ও পরিচালনার সঙ্গে বেশি সংখ্যায় যুক্ত হচ্ছেন।

তিনি আরও মনে করেন, ‘ফ্রেন্ডস’ একটি কাল্পনিক জগৎ তৈরি করেছিল, যেখানে বাস্তবতার চেয়ে বিনোদনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাস্তব জীবনে একজন মা ও শিশুর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে লেখক বেকি বার্নিকোটের লেখা ‘ক্রাই व्हेন দ্য বেবি ক্রাইজ’ এবং জিল মারফির লেখা ‘ফাইভ মিনিটস পিস’, ‘পিস অ্যাট লাস্ট’ ও ‘হোয়াটএভার নেক্সট!’-এর মতো বইগুলোর উদাহরণ দেন।

তার মতে, এই বইগুলোতে মাতৃত্বের আসল চিত্র আরও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *