জন্মদাতার কাছে ফিরতে বন্ধুর সাহা্য, বন্ধুত্বের ২৫ বছর!

এক অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্ব: কোরিয়ায় এক আকস্মিক সাক্ষাতে জন্ম নিল আজীবনের বন্ধন

ছোট্ট লিন্সি ডেব্যাটস যখন মাত্র ছয় মাসের শিশু, তখন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এক আমেরিকান পরিবার তাকে দত্তক নেয়। এরপর প্রায় দুই দশক কেটে যায়, লিন্সি আর জন্মভূমি কোরিয়ার দিকে ফিরে তাকাননি।

১৯৯০-এর দশকে আমেরিকার মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে বেড়ে ওঠা লিন্সি তাঁর পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য নিয়ে অনেক দ্বিধায় ভুগতেন। তাঁর বয়স যখন উনিশ, তখন তিনি তাঁর দত্তক গ্রহণকারী সংস্থার কাছ থেকে একটি চিঠি পান।

চিঠিতে লেখা ছিল, তাঁর জন্ম পরিবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে আগ্রহী। লিন্সি রাজি হন। এরপর শুরু হয় দুই পরিবারের মধ্যে চিঠি চালাচালি।

২০০০ সালে, লিন্সি যখন ১৯ বছরের তরুণী, তখন কোরিয়া সরকারের একটি উদ্যোগে তিনি অন্যান্য দেশের কোরীয় বংশোদ্ভূত দত্তক সন্তানদের সঙ্গে সেওলে যান। সেখানে তিনি এক কঠিন অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়েন।

একদিকে যেমন অন্যান্য দত্তক সন্তানদের সঙ্গে মিশে আনন্দিত হয়েছিলেন, তেমনই নিজেকে একা, বিভ্রান্ত ও নিঃসঙ্গও লাগছিল তাঁর।

কোরিয়া ভ্রমণের সেই দুই সপ্তাহ শেষে লিন্সি প্রথমবার তাঁর জন্মদাতার সঙ্গে দেখা করেন। লিন্সি জানতে পারেন তাঁর বাবা-মা সেওলে নয়, সিউল থেকে দু’ঘণ্টা দূরের ডেজিয়নে থাকেন।

ডেজিয়নে তাঁদের সঙ্গে দশ দিন কাটানোর পর লিন্সি বুঝতে পারেন, তাঁর পরিবার কোরিয়ান ভাষায় কথা বললেও তিনি সেই ভাষায় তেমন দক্ষ নন, তাঁদের মধ্যে মানসিক ভাব আদান-প্রদানও কঠিন ছিল।

এরই মধ্যে লিন্সি একা সময় কাটানোর জন্য সিউলের ইথেওন-এ যেতেন। সেখানে আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির একটি ছোঁয়া ছিল, যা তাঁকে স্বস্তি দিতো।

একদিন সন্ধ্যায় ইথেওনের একটি বার ও রেস্তোরাঁর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তিনি কয়েকজন আমেরিকান যুবকের কণ্ঠস্বর শুনতে পান। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই পরিচয় হয় ডগ গিস্টের সঙ্গে, যিনি তখন দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত একজন মার্কিন সেনা ছিলেন।

ডগ লিন্সিকে বুঝতে পারেন এবং বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন। লিন্সি জানান, তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে চান।

ডগ তখন লিন্সিকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। ডগ কোরিয়ান ভাষা ভালো জানতেন। তিনি লিন্সির পরিবারকে উপহার দেন এবং কোরিয়ান ভাষায় সুন্দরভাবে কথা বলেন।

লিন্সির পরিবারও ডগকে সাদরে গ্রহণ করে।

এর দুই বছর পর, লিন্সি আবার কোরিয়া যান। এবার তাঁর ইচ্ছা ছিল, জন্ম পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানো এবং তাঁদের সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার।

ডগ তখন লিন্সিকে সঙ্গ দেন এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে মিশতে সাহায্য করেন। ডগের সহায়তায় লিন্সি তাঁর পরিবারের সঙ্গে গভীর আলোচনা করেন। তাঁদের মধ্যে অতীতের অনেক অজানা কথা উঠে আসে।

এরপর কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর। ডগ বিয়ে করেন, তাঁর একটি কন্যা সন্তান হয় এবং লিন্সি তাঁর মেয়ের গডমাদার হন।

লিন্সি এখন একজন ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার এবং মিনেসোটায় বসবাস করেন। তিনি তাঁর জন্ম পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।

আজ, লিন্সি এবং ডগের বন্ধুত্বের ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাঁরা দু’জনই একে অপরের জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

লিন্সি বলেন, “আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ যে, ইথেওনে ডগের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।”

তথ্যসূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *