মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ বোর্ডের সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু “নজিরবিহীন পদক্ষেপ”-এর প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বোর্ড মনে করে, এই পদক্ষেপগুলো প্রোগ্রামের মূল নীতির পরিপন্থী। এই ঘটনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের সুযোগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, ফুলব্রাইট ফরেন স্কলারশিপ বোর্ডের প্রায় সকল সদস্য বুধবার তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এমন কিছু কাজ করছে যা আইনের পরিপন্থী।
বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য নির্বাচিত বেশ কিছু ব্যক্তিকে স্কলারশিপ দিতে অস্বীকার করা হয়েছে। এছাড়াও, ১,২০০ জনের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর তালিকা তৈরি করে তাদের নতুন করে যাচাই-বাছাই করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, যা অনুমোদিত নয়।
বোর্ডের পদত্যাগকারী সদস্যরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তাদের এই পদক্ষেপ “আইনের সঙ্গে শুধু সাংঘর্ষিক নয়, বরং ফুলব্রাইট মিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। এর মধ্যে রয়েছে বাকস্বাধীনতা এবং শিক্ষাগত স্বাধীনতা, যা কংগ্রেসের আইনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।”
ফুলব্রাইট স্কলারশিপ বোর্ড ১৯৪১ সালে কংগ্রেস কর্তৃক গঠিত হয়। এই বোর্ডের সদস্যরা শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন করে থাকেন।
পদত্যাগের পর বর্তমানে বোর্ডের সদস্য হিসেবে কেবল কারমেন এস্তরাদা-শায়ে-এর নাম জানা যাচ্ছে।
সিনেটর জেন শাহীন, যিনি সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট, এই পদক্ষেপের ফলে “ফুলব্রাইট প্রোগ্রামের গুণগত মান পরিবর্তন হবে” বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি বুঝি এবং সম্মান করি যে দ্বিদলীয় ফুলব্রাইট বোর্ড একটি রাজনৈতিক ও বেআইনি প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানাতে রাজি না হয়ে একযোগে পদত্যাগ করেছেন।
তবে আমি গভীরভাবে অবগত যে, এই পদক্ষেপে ফুলব্রাইট প্রোগ্রামের গুণগত মান এবং স্বাধীন গবেষণা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা আমাদের দেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে।”
বোর্ড জানিয়েছে, তারা ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার আইনি বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন, কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বরং বিষয়টির সুরাহার জন্য কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
এর মধ্যে রয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থীদের ভিসা স্থগিত করা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যাচাইয়ের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা।
যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপ এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এর ফলে ভবিষ্যতে মার্কিন শ্রমবাজার এবং অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফুলব্রাইট প্রোগ্রাম বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত সম্মানজনক একটি শিক্ষা-বিনিময় কর্মসূচি।
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে আসা-যাওয়া করে।
এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামের গুণগত মান বজায় থাকলে বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে।
তাই, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের সুযোগ কমে যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন