ভবিষ্যতে কি ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া দিয়ে তৈরি হবে বাড়িঘর? বিজ্ঞানীরা নতুন এক গবেষণায় এমনটাই আভাস দিচ্ছেন। পরিবেশ-বান্ধব নির্মাণ সামগ্রীর খোঁজে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে এটিকে দেখা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হলো সিমেন্ট উৎপাদন। লন্ডন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক Chatham House এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রায় ৮% আসে সিমেন্ট তৈরির প্রক্রিয়া থেকে। প্রতি বছর প্রায় ৪০০ কোটি মেট্রিক টনের বেশি সিমেন্ট উৎপাদিত হয়। এই কারণে, সিমেন্ট উৎপাদনকে যদি একটি দেশ হিসেবে ধরা হতো, তাহলে কার্বন নিঃসরণের দিক থেকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরেই তার স্থান। বিজ্ঞানীরা তাই খুঁজছেন সিমেন্টের বিকল্প।
যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানাতে একদল গবেষক মাটির নিচে থাকা ছত্রাকের জাল, যা মাইসেলিয়াম (mycelium) নামে পরিচিত, তা ব্যবহার করে নতুন ধরনের নির্মাণ সামগ্রী তৈরি করেছেন। তারা ছত্রাকের এই জালকে কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করে, এর মধ্যে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করান। ক্যালসিয়াম কার্বোনেট হল সেই রাসায়নিক উপাদান যা শামুক, ডিমের খোসা এবং চুনাপাথরে পাওয়া যায়। ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের এই জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াটি ‘বায়ো-মিনারেলিজেশন’ নামে পরিচিত। এর ফলে নরম ও স্থিতিস্থাপক মাইসেলিয়াম শক্ত এবং হাড়ের মতো কাঠামোতে পরিণত হয়।
গবেষণা দলের প্রধান, মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. চেলসি হেভারান জানান, তারা প্রথমে নিজেরাই ছত্রাক ব্যবহারের চেষ্টা করেন, কিন্তু পরে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে দ্রুত শক্ত উপাদান তৈরি করতে সক্ষম হন। ব্যাকটেরিয়াগুলো ইউরিয়া গ্রহণ করে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের জাল তৈরি করে, যা ছত্রাকের চারপাশে জমাট বাঁধে। তাদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে তৈরি উপাদান কয়েক সপ্তাহ ধরে সক্রিয় থাকে। ভবিষ্যতে এর মেয়াদ আরও বাড়ানো সম্ভব। বিজ্ঞানীরা এখন ভাবছেন, এই ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে দেয়ালের ফাটল সারানো বা বাতাসের গুণমান পর্যবেক্ষণের মতো কাজ করা যাবে কিনা।
যদিও এই ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর শক্তি ও স্থায়িত্ব এখনো কংক্রিটের সমতুল্য নয়, তবুও মাইসেলিয়াম একটি সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। এর নমনীয়তার কারণে, বিমের (beam) মধ্যে রক্তনালীর মতো চ্যানেল তৈরি করা যেতে পারে, যা উপাদানটিকে জীবিত রাখতে সাহায্য করবে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে ছোট আকারের ভবন তৈরিতে, যেমন একতলা বাড়ি বা ছোট কাঠামোতে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে, এখনো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি। এই ধরনের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের আগে এর স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। ছত্রাক শ্বাসতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ড. হেভারান বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর জন্য উপযুক্ত মানদণ্ড তৈরি করা দরকার, কারণ বর্তমানে জীবিত উপাদানযুক্ত ইটের জন্য কোনো নিয়ন্ত্রক কাঠামো নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্মাণ শিল্পে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। পরিবেশের উপর এর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, কারণ সিমেন্টের ব্যবহার কমবে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে যদি মহাকাশে অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হয়, তবে এই পদ্ধতি সিমেন্ট ও কংক্রিট বহনের চেয়ে সহজ হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন