বিশ্ব ফ্যাশন জগতে পরিবেশ-বান্ধব পোশাকের ধারণা নিয়ে আসা গ্যাব্রিয়েলা হার্স্ট। এই ফ্যাশন ডিজাইনার বর্তমানে তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ডের ওপর মনোযোগ দিচ্ছেন, তবে এর আগে তিনি প্যারিসের বিখ্যাত ফ্যাশন হাউস ক্লোয়ে-এর সৃজনশীল পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
গ্যাব্রিয়েলার ফ্যাশন ভাবনা শুধু পোশাকের নকশার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি পরিবেশ সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
উরুগুয়ের একটি খামারে বেড়ে ওঠা গ্যাব্রিয়েলার জীবনে প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। তাঁর শৈশব ছিল শহরের কোলাহল থেকে দূরে, যেখানে সবকিছু পুনর্ব্যবহার করার সংস্কৃতি ছিল।
এই অভিজ্ঞতাই তাঁকে শিখিয়েছে কীভাবে সম্পদকে ভালোভাবে কাজে লাগানো যায় এবং বর্জ্য কমানো যায়। একবার পুরনো ওয়াটার হিটার পরিবর্তনের সময় তাঁর খামারের তত্ত্বাবধায়ক নতুন যন্ত্র কেনার বদলে পুরোনোটি সারাই করার কথা বলেছিলেন, কারণ সেখানে সহজে জিনিসপত্র ফেলে দেওয়ার সুযোগ ছিল না। এই বিষয়টি গ্যাব্রিয়েলার মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
গ্যাব্রিয়েলা হার্স্টের ফ্যাশন ভাবনা শুধু নান্দনিকতাই নয়, বরং এটি একটি আন্দোলনের অংশ। তাঁর ডিজাইন করা পোশাকে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি সবসময় গুরুত্ব পায়।
তিনি পুরোনো কাপড় ব্যবহার করেন, যা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বর্জ্য কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, তিনি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশের ওপর ফ্যাশনের প্রভাব কমাতে কাজ করেন।
২০২০ সালে, তিনি ফ্যাশন ইতিহাসে প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ র্যাম্প শো করেন।
ক্লোয়ে-এর সৃজনশীল পরিচালক থাকাকালীন গ্যাব্রিয়েলা হার্স্ট এই ব্র্যান্ডটিকে পরিবেশ-বান্ধব করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
তাঁর সময়ে ক্লোয়ে একটি ‘বি কর্পোরেশন’-এ পরিণত হয়। ‘বি কর্পোরেশন’ হলো এমন একটি স্বীকৃতি, যা কোনো কোম্পানিকে সামাজিক এবং পরিবেশগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য উৎসাহিত করে, মুনাফার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় টেকসই উন্নয়নকে।
ক্লোয়ে ছিল প্রথম বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ড, যারা এই স্বীকৃতি অর্জন করে।
গ্যাব্রিয়েলার কাজের প্রভাব শুধু ফ্যাশন দুনিয়ায় নয়, বরং বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বিষয়ক আলোচনায়ও দেখা যায়। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।
তিনি মনে করেন, ফ্যাশন একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানুষের সচেতনতা বাড়াতে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বর্তমানে গ্যাব্রিয়েলা তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ডের ওপর আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।
খুব শীঘ্রই প্যারিস এবং জাপানে তাঁর নতুন দোকান চালু হতে যাচ্ছে। এই দোকানগুলোতেও পরিবেশ-বান্ধব নীতি অনুসরণ করা হবে।
গ্যাব্রিয়েলার মতে, বিলাসিতা মানে শুধু দামি পোশাক নয়, বরং পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াটাও এর অংশ। তাঁর গ্রাহকরাও এখন এই ধারণার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন এবং পরিবেশ সচেতন হয়ে পোশাক কেনাকাটা করছেন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক