একজন ব্রিটিশ ফটোগ্রাফারের যুক্তরাজ্য ভ্রমণের এক অসাধারণ গল্প।
হারানো ভালোবাসার স্মৃতি, মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা আর একটি গাধা – এই সবকিছুকে সঙ্গী করে যুক্তরাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এক অসাধারণ যাত্রা সম্পন্ন করেছেন এক ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার।
প্রায় ৭০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তিনি তৈরি করেছেন এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা, যা শুধু তার ব্যক্তিগত জীবনকেই পরিবর্তন করেনি, বরং মানুষের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিতেও এনেছে গভীর পরিবর্তন।
শুরুর কথা
বছর কয়েক আগের এক ব্যক্তিগত বিচ্ছেদের পর একাকীত্ব ঘোচাতে এবং জীবনের নতুন দিগন্ত খুঁজে নিতে এই দুঃসাহসিক যাত্রার পরিকল্পনা করেন তিনি।
এর আগে তিনি উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং কিরগিজস্তানে পায়ে হেঁটে এক হাজার মাইলের বেশি পথ ভ্রমণ করেছিলেন।
প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার এই অভিজ্ঞতা তাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছিল।
তবে, যুক্তরাজ্যের মানুষের সঙ্গে সেই অর্থে সংযোগ স্থাপন করতে পারছিলেন না।
গাধা মার্টিনের সঙ্গে পথচলা
যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময়, তিনি এমন কিছু খুঁজছিলেন যা মানুষকে তার প্রতি আকৃষ্ট করবে।
স্থানীয় একটি খামার থেকে তিনি মার্টিন নামের একটি গাধাকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন।
মার্টিন ছিল খামারের অন্য গাধাগুলোর থেকে একটু আলাদা, কিছুটা একাকী।
সাত মাস ধরে মার্টিনের সঙ্গে প্রশিক্ষণের পর তারা তাদের যাত্রা শুরু করেন।
স্কটল্যান্ডের কেপ র্যাথের বাতিঘর থেকে ডরসেটের বাতিঘর পর্যন্ত ছিল তাদের গন্তব্য।
পথের অভিজ্ঞতা
যাত্রা পথে প্রকৃতির নানা রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি।
কখনও উঁচু-নিচু পথ, কখনও বা কাদা-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তাদের পথ চলতে হয়েছে।
প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে, মোকাবেলা করতে হয়েছে নানা ধরনের পোকা-মাকড়ের উপদ্রব।
প্রথম ছয় সপ্তাহ তার জন্য ছিল খুবই কঠিন।
তিনি দ্বিধায় ছিলেন, এই যাত্রা তার জন্য সঠিক কিনা এবং মার্টিন এতে আনন্দ পাচ্ছে কিনা।
মানুষের ভালোবাসা
তবে এই যাত্রাপথে তিনি সবচেয়ে বেশি যা অনুভব করেছেন, তা হলো মানুষের ভালোবাসা।
পথে মানুষজন তাদের সাদরে গ্রহণ করেছে, তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে, খাবার জুগিয়েছে এবং উৎসাহ জুগিয়েছে।
কারো কাছ থেকে তিনি কোনোদিনও খারাপ ব্যবহার পাননি।
মানুষ যে বন্ধুসুলভ হতে চায়, সেই ধারণাই যেন আরও একবার প্রমাণিত হয়েছিল।
ফটোগ্রাফার বলেন, “মার্টিন আমার সঙ্গী হওয়ার কারণে মানুষের সঙ্গে মিশতে অনেক সুবিধা হয়েছে।”
মার্টিনের সঙ্গে সম্পর্ক
এই ভ্রমণের মাধ্যমে ফটোগ্রাফার, মানুষ এবং একটি প্রাণীর মধ্যে গভীর সম্পর্কের জন্ম হয়।
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সম্পর্কের ভিত্তি হলো পারস্পরিক বিশ্বাস।
মার্টিনের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে এবং দিনের শুরুতে তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে শুরু করেন।
মার্টিনও তার প্রতি ভালোবাসা জানাতে শুরু করে।
উপসংহার
এই ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি মানুষের প্রতি বিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন।
তিনি আরও শিখেছেন যে, ভবিষ্যতের কথা ভেবে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে বর্তমানকে উপভোগ করাই জীবনের আসল মজা।
বর্তমানে মার্টিন এখনো সেই খামারেই থাকে, তবে ফটোগ্রাফার নিয়মিত তার দেখাশোনা করেন এবং তাদের মধ্যে এখনো গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।
এই ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি শুধু যুক্তরাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হেঁটে যাননি, তিনি একটি ১৫ বছর বয়সী গাধা বন্ধুর সঙ্গে সারা জীবনের জন্য একটি সম্পর্ক তৈরি করেছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান