অবিশ্বাস্য শহর: যেখানে আইসক্রিমই রাজা!

বদলে যাওয়া জলবায়ুর কারণে যখন সারা বিশ্বে কৃষিকাজ কঠিন হয়ে পড়ছে, তখন ভারতের রাজস্থান রাজ্যের একটি শহর, গাংগাপুর, এক ভিন্ন ধরনের ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এখানকার কৃষকরা তাঁদের জীবিকা নির্বাহের জন্য বেছে নিয়েছেন অভিনব এক পথ—আইসক্রিম ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছেন তাঁরা।

আর এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে এক দারুণ গল্প।

গাংগাপুরের শাহরুক শাহ নামের এক যুবক, যিনি একসময় বাবার সাথে নিজের তিন একর জমিতে ভুট্টা ও গমের চাষ করতেন, এখন একজন সফল আইসক্রিম বিক্রেতা।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের অভাব আর খরার কারণে কৃষিকাজ যখন কঠিন হয়ে পড়েছিল, তখন তাঁর বাবা নতুন কিছু করার কথা ভাবেন। ২০১৪ সাল নাগাদ, শাহরুকের বাবার এই নতুন ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় আইসক্রিম ব্যবসার ধারণা।

গ্রীষ্মকালে যখন চার মাস ধরে তীব্র খরা দেখা দেয়, তখন তাঁরা এই ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েন।

বর্তমানে গাংগাপুর শহরটি পরিচিতি লাভ করেছে আইসক্রিম ট্রাক তৈরির কারখানা হিসেবে।

শহরের প্রধান সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে গ্যারেজ, যেখানে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় স্টেইনলেস স্টিলের বডি এবং মিনি ট্রাকে সেগুলো স্থাপন করা হয়।

এই ট্রাকগুলো ‘টেম্পো’ নামে পরিচিত এবং আকর্ষণীয় সাইনবোর্ড ও এলইডি লাইট দিয়ে সজ্জিত করা হয়।

এছাড়াও, কুলার, আইসক্রিম তৈরির মেশিন, সিরাপ ও স্কুপ—এসবের দোকানও এখানে গড়ে উঠেছে, যা আইসক্রিম ব্যবসার সাথে জড়িতদের চাহিদা মেটায়।

আগেও গাংগাপুরে খাদ্য তৈরির ছোটখাটো কিছু কারখানা ছিল, তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও পানির অভাবের কারণে রাজস্থানের কৃষকরা যখন বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছিলেন, তখন আইসক্রিম টেম্পোর চাহিদা বাড়তে শুরু করে।

শাহরুক শাহের পরিবার ছিল এই ব্যবসার প্রথম দিকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম।

তাঁদের সাফল্যের গল্প দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, আর এর ফলস্বরূপ, এখন অনেকেই এই ব্যবসায় ঝুঁকছেন।

শাহরুক শাহ বলেন, “আমরা চার থেকে ছয় মাস কাজ করে সারা বছরের জন্য যথেষ্ট উপার্জন করতে পারি।” বর্তমানে তিনি নিজের একটি আইসক্রিম টেম্পো চালান, যা গাংগাপুর থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে অবস্থিত একটি গ্রামে গ্রীষ্মকালে ব্যবসা করে।

তিনি আরও জানান, অনেক মৌসুমী আইসক্রিম বিক্রেতা এক হাজার মাইলেরও বেশি দূরে যান ব্যবসা করতে, যেখানে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা আইসক্রিম কিনতে ভালোবাসেন।

গাংগাপুরের এই সাফল্যের কারণে ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসছেন তাঁদের টেম্পো তৈরি করানোর জন্য।

ইউটিউবে গাংগাপুরের টেম্পো ব্যবসার ভিডিও তৈরি করেন বাবা রাইচাঁদ।

তিনি জানান, বর্তমানে শহরে ২০০-এর বেশি টেম্পো তৈরির কারখানা রয়েছে, যা তিন বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ।

এই ব্যবসায়ীরা শুধু ভারতেই নয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপালেও তাঁদের তৈরি টেম্পো সরবরাহ করেন।

শাহরুকের হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে গাংগাপুরে ৪ থেকে ৫ লাখ আইসক্রিম টেম্পো তৈরি হয়েছে।

তিনি নিজে তাঁর কারখানায় এই পর্যন্ত প্রায় ৮০টি টেম্পো তৈরি করেছেন।

আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা, আশিস সুওয়ালকা, যিনি একসময় কৃষক পরিবারের সদস্য ছিলেন, এখন রাজস্থানের উদয়পুরে বসবাস করেন।

তাঁর তিনটি আইসক্রিম টেম্পো রয়েছে এবং তিনি এই ব্যবসায় বেশ সফল।

তাঁর মতে, “জনসংখ্যা বাড়ছে, আর সবাই মিষ্টিমুখ করতে চায়।”

গাংগাপুরের এই গল্প জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা থেকে উত্তরণের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এটি প্রমাণ করে, প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কিভাবে নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি করা যায় এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা যায়।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *