বিশাল ঢেউয়ের সার্ফার গ্যারেট ম্যাকনামারা: আঘাত থেকে জীবনের নতুন পাঠ।
সমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ে সার্ফিং করা – এক কথায় ভয়ঙ্কর। এই কাজটি যিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তিনি হলেন গ্যারেট ম্যাকনামারা।
বিশাল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন এই সাহসী সার্ফার। তবে জীবনের এই কঠিন পথ পাড়ি দিতে গিয়ে কঠিন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি, যা তার জীবনকে নতুন করে সাজাতে বাধ্য করেছে।
২০১১ সালে পর্তুগালের নাজারেতে প্রায় ৭৮ ফুট উঁচু এক বিশাল ঢেউয়ে সার্ফিং করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন গ্যারেট। জলের এই দানবীয় রূপকে জয় করা মানুষটির সাহস সত্যিই ঈর্ষণীয়।
কিন্তু ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মাভেরিক্সে সার্ফিং করার সময় এক দুর্ঘটনায় তার কাঁধ ভেঙে যায়। এই আঘাত শুধু শারীরিক কষ্টই দেয়নি, বরং জীবনের কঠিন এক সময়ের সূচনা করেছিল।
ম্যাকনামারার স্ত্রী নিকোল জানান, সেই সময়টা তাদের সম্পর্কের জন্য বেশ কঠিন ছিল। আঘাতের পর গ্যারেট হতাশায় ভুগতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, তখন গ্যারেট ভুল কারণে ঢেউগুলোর পেছনে ছুটছিল। সে অন্যদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিল, যা সঠিক ছিল না।”
নিকোল আরও যোগ করেন, “এই ঘটনার পর আমাদের সম্পর্কের মোড় ঘুরে যায়, এবং আমরা নতুন করে জীবনকে দেখতে শিখি।”
আঘাতের পর ম্যাকনামারার জীবনে বড় পরিবর্তন আসে। তিনি জানান, “আঘাতটা আমাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।
এখন আমি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই, জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করি এবং ধীরে ধীরে সবকিছু করার চেষ্টা করি, যা আগে আমার মধ্যে ছিল না।”
গ্যারেট ম্যাকনামারার জীবনযাত্রা অনেকের কাছেই কল্পনার অতীত। সারা বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ, ঝুঁকি এবং পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে কাটে তার জীবন।
এই কঠিন পথচলায় তিনি সবসময় তার স্ত্রীর পরামর্শকে গুরুত্ব দেন। তাদের সম্পর্কের বিষয়ে নিকোল বলেন, “আমরা দু’জন দু’জনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, তবে সম্ভবত এটাই আমাদের সম্পর্কের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।”
গ্যারেটের ছেলে ব্যারেলও বাবার মতোই সমুদ্র ভালোবাসে। তবে ম্যাকনামারা চান না তার সন্তান এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় আসুক।
তিনি বলেন, “আমি চাই, ব্যারেল যদি আমার পথ অনুসরণ করতে চায়, তবে তাকে কঠোর প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং সব ধরনের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
বর্তমানে ম্যাকনামারা তার ‘১০০ ফুট ওয়েভ’ (100 Foot Wave) নামের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে কাজ করছেন, যেখানে সার্ফারদের জীবন এবং তাদের পরিবারের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়।
ভবিষ্যতে তিনি হয়তো আর আগের মতো বিশাল ঢেউয়ে চড়বেন না, তবে সার্ফিংয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক সবসময় থাকবে।
তিনি চান, অন্যদের সাহায্য করে এবং জেট স্কি চালিয়ে এই ভালোবাসার সঙ্গে যুক্ত থাকতে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন