গ্যারি লিনেকার: খেলার মাঠ থেকে বিতর্কের কেন্দ্রে। বিখ্যাত ফুটবলার এবং ধারাভাষ্যকার গ্যারি লিনেকার সম্প্রতি বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবারও আলোচনায় এসেছেন।
মাঠের খেলার জগৎ থেকে তিনি কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন, সেই বিষয়গুলোই উঠে এসেছে এই সাক্ষাৎকারে। মূলত, গাজা পরিস্থিতি নিয়ে একটি তথ্যচিত্রের পক্ষে তাঁর অবস্থান এবং বিবিসির ‘ম্যাচ অফ দ্য ডে’ অনুষ্ঠান থেকে তাঁর সাময়িক অব্যাহতি নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কগুলো নতুন করে সামনে এসেছে।
সাক্ষাৎকারে লিনেকার তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন, সেইসাথে তুলে ধরেছেন খেলা এবং সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তাঁর মতামত। বিশেষ করে, গাজা পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মন্তব্য এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
কেউ কেউ তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন, আবার কারো কারো মতে, তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
লিনেকারের বিতর্কগুলো মূলত দুটি প্রধান বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রথমত, তিনি গাজা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র পুনরায় সম্প্রচারের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, ব্রিটেনের অভিবাসন নীতি নিয়ে তাঁর করা কিছু মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিবিসি’র সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খানিকটা তিক্ত হয়, যার ফলস্বরূপ তাঁকে ‘ম্যাচ অফ দ্য ডে’ অনুষ্ঠান থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এই ঘটনাগুলো আবারও গণমাধ্যম এবং জনসাধারণের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে – খেলার জগতের তারকারা কি সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত দিতে পারেন? নাকি তাঁদের প্রধান পরিচয় ক্রীড়াবিদ হিসেবেই থাকা উচিত?
এই বিতর্কের একটি দিক হলো, গণমাধ্যমে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কতটা জরুরি। বিশেষ করে, যখন কোনো বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে, তখন সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষতা রক্ষার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
লিনেকারের সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর রাজনৈতিক মন্তব্যগুলো বিবিসির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাঁদের মতে, একজন ধারাভাষ্যকারের উচিত খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকা।
কিন্তু লিনেকারের সমর্থকরা মনে করেন, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার অধিকার সবার আছে। তাঁরা মনে করেন, লিনেকার তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করছেন।
এই বিতর্কের ঢেউ শুধু যুক্তরাজ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্লেষক এই ঘটনাটিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং তারকারা তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন কিনা, সেই সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।
বাংলাদেশেও খেলা এবং সমাজের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়। অনেক সময় দেখা যায়, খেলোয়াড় বা ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে তাঁদের মতামত প্রকাশ করেন। এই ধরনের ঘটনায় একদিকে যেমন তাঁদের জনপ্রিয়তা বাড়ে, তেমনি বিতর্কের সৃষ্টিও হতে পারে।
গ্যারি লিনেকারের ঘটনা সেই বিতর্কেরই একটি প্রতিচ্ছবি, যা আমাদের সমাজে গণমাধ্যমের ভূমিকা, তারকার দায়িত্ব এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান