যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে, সমকামী (গে) সম্প্রদায়ের মানুষজন বর্তমানে তাঁদের জীবনে সবচেয়ে বড় ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিখ্যাত ব্রিটিশ চিত্রনাট্যকার রাসেল টি ডেভিস। সম্প্রতি ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত ‘গে রেডিও প্রাইড অ্যাওয়ার্ডস’-এ দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান।
ডেভিস বলেন, এই বিদ্বেষপূর্ণ পরিস্থিতি শুধু আমেরিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যুক্তরাজ্যেও এর প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে।
ডেভিসের ভাষ্যমতে, একজন সমকামী পুরুষ হিসেবে তিনি এখন এক বিশাল ক্রোধ, সহিংসতা এবং প্রতিশোধের ঢেউয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন। নভেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে একজন গে মানুষ হিসেবে তাঁর সঙ্গে কথা বলার ধরনেও পরিবর্তন এসেছে।
তাঁর মতে, ঘৃণা-ভাষণের এই বিস্তার বাস্তব জীবনেও প্রভাব ফেলছে। ডেভিস আরও বলেন, তাঁর বয়স ৬১ বছর এবং তিনি গে সমাজকে খুব ভালোভাবে চেনেন।
তাঁর ধারণা, বর্তমান পরিস্থিতি আগে দেখা যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বিপদজনক।
অনুষ্ঠানে ডেভিস ট্রাম্প এবং তাঁর সহযোগী এলন মাস্কের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় সময়টা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।”
তিনি জানান, ১৯৮১ সালে যখন তাঁর বয়স আঠারো ছিল, তখন থেকেই একটি নতুন ভাইরাসের গুজব শোনা যাচ্ছিল, যা তাঁদের সম্প্রদায়ের জন্য অনেক কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। কিন্তু তাঁরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।
ডেভিস উল্লেখ করেন, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে যখন তিনি ‘কুয়্যার অ্যাজ ফোক’ (Queer as Folk) নামের একটি টিভি সিরিজ লিখেছিলেন, তখন লেখকেরা বিভিন্ন ধারণা নিয়ে কাজ করতেন এবং পর্দায় গে ও লেসবিয়ান চরিত্রদের উপস্থাপন করতেন।
তিনি যদি ২০২৫ সালের পরিস্থিতি কল্পনা করতে পারতেন, তাহলে হয়তো “সবকিছু রংধনুর মতো হতো, হাতে হাত রেখে সবাই পথ চলত, সেখানে থাকত সাম্য, সাম্য, সাম্য।” কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ১৯৮০-এর দশকের চেয়েও খারাপ।
ডেভিস বলেন, “আমেরিকা থেকে আসা হুমকি ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’-এর মতো, যেন পশ্চিম থেকে একটি অশুভ শক্তি rise করছে, এবং এটি সত্যিই একটি খারাপ শক্তি।” তিনি আরও যোগ করেন, “আগেও খারাপ প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন, কিন্তু এমনটা আগে কখনো হয়নি যে, কোনো প্রযুক্তি বিলিয়নেয়ার প্রকাশ্যে তাঁর রূপান্তরিত (ট্রান্স) মেয়ের প্রতি ঘৃণা দেখাচ্ছেন।”
ডেভিসের মতে, এলন মাস্ক টুইটার কিনে নেওয়ার পর এর নাম পরিবর্তন করে ‘এক্স’ রাখেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাস্কের মালিকানায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই প্ল্যাটফর্মটিতে ঘৃণা-ভাষণ ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
ডেভিস বলেন, “ইতিহাসে এমনটা আগে কখনো ঘটেনি। এটি খুবই ভীতিকর, কারণ তিনি এবং তাঁর মতো মানুষেরা তথ্যের নিয়ন্ত্রণ করেন, মানুষের চিন্তাভাবনার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন, যা এখন আমাদের উদ্বেগের কারণ।”
তবে ডেভিস মনে করেন, গে সম্প্রদায় সবসময় বিপদের সময় ঐক্যবদ্ধ হয়। তাঁরা আবারও একত্রিত হয়ে এই বিদ্বেষ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
তিনি বলেন, “এলন মাস্কের জগতে, যেখানে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, সেখানে শিল্পীরা সবসময় যা করে এসেছেন, তাই করা হবে। গোপনে মিলিত হওয়া, পরিকল্পনা করা, গান গাওয়া, ছবি আঁকা, বক্তৃতা করা এবং প্রতিবাদ জানানো হবে।” ডেভিস আরও যোগ করেন, “যদি আমাদের আবারও বেসমেন্টে বসে বিদ্রোহী হতে হয়, যেখানে শিল্পের জন্ম হয়, তবে আমরা তাই করব।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান