গাজায় খাদ্য কেন্দ্রের ভয়াবহ দৃশ্য! হাজারো মানুষের ভিড়!

গাজায় খাদ্য বিতরণের কেন্দ্রে চরম বিশৃঙ্খলা, দুর্ভিক্ষের শিকার হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।

গাজায় মানবিক বিপর্যয় ক্রমশ বাড়ছে। টানা তিন মাস ধরে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্গতি। খাবার সংগ্রহের জন্য ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি, আর তাতেই তৈরি হচ্ছে চরম বিশৃঙ্খলা। ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আহত হচ্ছেন অসহায় মানুষ।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে মঙ্গলবার দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। নারী, পুরুষ ও শিশুসহ হাজারো মানুষ খাদ্য সংগ্রহের জন্য ত্রাণ কেন্দ্রের দিকে ছুটে যান। তাদের একটাই আকুতি, কোনোমতে কয়েক মুঠো খাবার সংগ্রহ করে ক্ষুধা নিবারণ করা। অপুষ্টি আর অনাহারে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে মরিয়া চেষ্টা তাদের। এসময় ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশের সময় ইসরায়েলি সেনারা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়।

গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরু হয়। এরপর চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এর ফলে মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়ে ওঠে। খাদ্য সংকটের কারণে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার মতো মিত্র দেশগুলো ইসরায়েলকে হুঁশিয়ার করে জানায়, ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক না করলে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পরে ইসরায়েল জরুরি ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর অনুমতি দেয়। তবে এই ত্রাণ বিতরণের প্রক্রিয়া নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিবর্তে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। জর্ডানের আম্মান থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি হামদা সালহুত জানান, “ইসরায়েলি সরকারের ভেতরেও এই ত্রাণ বিতরণের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব পাওয়া বেসরকারি সংস্থাটি পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।”

ইসরায়েল এই বিশৃঙ্খলার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে মানবিক সংকট তৈরি করেছে। আল জাজিরার আরেক প্রতিনিধি মোহাম্মদ ভাল জানান, হামাস ত্রাণ বিতরণে বাধা দিয়েছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার মতে, গাজায় দুই মিলিয়নের বেশি মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। তিনি বলেন, “গাজার সাধারণ মানুষ, তাদের শিশুদের জন্য, নিজেদের জন্য সামান্য খাবারের আশায় সেখানে জড়ো হয়েছে।”

মোহাম্মদ ভাল আরও জানান, গাজার ত্রাণ বিতরণ দক্ষিণ অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত করার পেছনে অন্য একটি কারণ থাকতে পারে। তার ভাষ্যমতে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সম্ভবত সেখানকার বাসিন্দাদের উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করতে চাইছে। তাদের আশঙ্কা, ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার এই পদক্ষেপ গাজার জনগণকে পুরোপুরি উচ্ছেদ করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫৪,০৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মানবিক সহায়তা সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতিকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *